নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী বছরের জুনেই যানবাহন চলার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের দ্বিতীয় অংশ তেঘরিয়া থেকে বাবুবাজার। এ অংশের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে আড়াই কিলোমিটারই এলিভেটেড (উড়াল)। ইতোমধ্যে এলিভেটেড অংশের কাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন। বাকি অংশ সমতলভূমিতে। এ অংশের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে যানবাহন চলার জন্য খুলে দেওয়া হলে রাজধানীর দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা হবে আরও সহজ। এর আগে মার্চে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশ ৫৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় ফেজের এলিভেটেড অংশের সড়কের পাশে রেলিং বসানো ও লেন বিভাজন রঙের কাজ চলছে। বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। টানা হচ্ছে বৈদ্যুতিক তার। এক্সপ্রেসওয়ের এ অংশ চালু হলে ঢাকার দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। বাবুবাজার থেকে মাওয়া যেতে লাগবে ৩০-৩৫ মিনিটের মতো। সেই সঙ্গে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এর ফলে যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৩ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশের নিচেও দুই পাশে প্রশস্ত রাস্তার কাজ চলছে অবিরাম। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়ায় সংযোগ সৃষ্টি করে বাবুবাজার ব্রিজে গিয়ে মিলেছে এক্সপ্রেসওয়ের এ অংশ। সরকারি আবাসিক প্রকল্প ঝিলমিলের মাঝবরাবর নির্মিত এলিভেটেড অংশ শুভাঢ্যা খালে এসে শেষ হয়েছে। এলিভেটেড অংশে শোঁ শোঁ করে গাড়ি চালিয়ে যেতে দুই পাশে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। শুভাঢ্যা খালের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি প্রশস্ত ব্রিজ। সেখান থেকে নেমে গেছে এক্সপ্রেসওয়ের ঝকঝকে রাস্তা যা সরাসরি যুক্ত করবে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকাকে। শুভাঢ্যা খালের ওপর নির্মিতব্য ব্রিজের নকশা নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হলে নকশায় সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে খালের পরিধি ও ব্রিজের প্রশস্ততা কিছুটা বাড়বে বলে জানা গেছে। নতুন শহর ঝিলমিলের বাসিন্দারাও তেঘরিয়া থেকে উঠতে পারবেন এ এক্সপ্রেসওয়েতে। একই পথ ধরে বিপরীতমুখী হয়ে যেতে পারবেন মাওয়া কিংবা বাবুবাজার। থাকবে না কোনো যানজট, ট্রাফিক সিগন্যাল। তবে এ পথে চলতে হলে দিতে হবে টোল। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) সবুজ উদ্দীন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা মূলত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেওয়েরই একটা অংশ। ফলে ওই প্রকল্পের যে ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা, সেখান থেকেই ব্যয় করা হচ্ছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি গত মার্চে যানবাহন চলার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে; যার মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী জুনের মধ্যেই তেঘরিয়া-বাবুবজার ব্রিজ অংশও খুলে দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের এ অংশ খুলে দেওয়া হলে বাবুবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, মোহাম্মদপুর ও কেরানীগঞ্জের এক অংশের বাসিন্দাদের সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ হবে। তারা এর সুবিধা নিয়ে স্বল্পসময়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবেন। একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ হবে। ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা ভোগ করছেন রাজধানীবাসী ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। কমেছে যাতায়াত ব্যয় ও ফুয়েল খরচ। কমেছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। প্রকল্পের এ অংশের কাজও চলছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুনেই খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলার জন্য। এলিভেটেড অংশ দূর থেকে দেখলে মনে হবে বড় কোনো ফ্লাইওভার। তেঘরিয়া থেকে সোজা গিয়ে নেমেছে কদমতলী শুভাঢ্যা খাল পর্যন্ত। এর পরই নয়াবাজার থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সমতলভূমিতে স্থাপিত চার লেনের চোখ ধাঁধানো সড়ক। সড়কের উভয় পাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ, ঘাস। শক্ত করে বাঁধা হয়েছে রাস্তার ঢাল। সব মিলিয়ে যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।