বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ে ঝুঁকছে মানুষ

জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ে ঝুঁকছে মানুষ

নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা ভেঙে পড়ায় তারা এখন ভোগবিলাস থেকে সরে এসে সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকেছে। এমনকি ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা ভেবে তাদের অনেকেই অতি প্রয়োজনীয় ব্যয়ও কাটছাঁট করার চেষ্টা করছে। ছোটখাটো আর্থিক সংকটে ব্যাংক থেকে সঞ্চয় না ভেঙে নিয়মিত উপার্জন থেকে তা সমন্বয় করে চলার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় ব্যাংকের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে অর্থলগ্নি বেড়েছে।

করোনা পরিস্থিতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ার ঠিক কী কারণ জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘করোনায় অনেক ব্যবসায়ী স্থবির হয়ে পড়েছিলেন। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণিও ঝুঁকি নিয়ে কোথাও বিনিয়োগ করেননি, টাকা খরচ না করে সঞ্চয় করছেন। ভবিষ্যতে কী পরিস্থিতি আসে, সেই বিবেচনা করে সবাই সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ কারণেই আমরা ভালো আমানত পেয়েছি, যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।’

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমানতে নতুন চিত্র দেখতে পেয়েছি। এক বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। মানুষ খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়িয়ে দিয়েছে। আর নতুন প্রকল্প না হওয়ায় তেমন ঋণও যাচ্ছে না।’

এই প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের এমডি মামুন মাহমুদ শাহ বলেন, মানুষ জীবনযাত্রার খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়িয়েছে।

করোনার কারণে খরচ কমিয়ে

অনেকে নতুন করে সঞ্চয় শুরু করেছেন। তাই ব্যাংকে সঞ্চয়ী আমানতও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে এখন প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। এর আগে এত বিপুল পরিমাণ আমানত কখনো আসেনি।

সঞ্চয় করার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এছাড়া মূলধন নিশ্চিত ও বেশি মুনাফা পাওয়ায় সঞ্চয়পত্রকেই সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ মনে করেন বিয়োগকারীরা। তাই সঞ্চয়পত্র কেনায় ঝুঁকছেন তারা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একক মাস হিসাবে শুধু মার্চেই বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রথম নয় মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে গত জানুয়ারিতে ১২ লাখ ৮৬ হাজার ২০১ কোটি টাকায় উঠেছে। এত বিপুল আমানত আগে কখনো দেখা যায়নি। ২০২০ সালের জুনের শেষে আমানত ছিল ১১ লাখ ৮০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আমানত বেড়েছিল ৭৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। তারও আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, করোনার মধ্যেই আমানত বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

এদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং তথা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়ে। তবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পালে সবচেয়ে বেশি হাওয়া লেগেছে চলমান মহামারিতে। পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাসৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেশি সচল ছিল। এরই ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধিতে। পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ঘরের সঞ্চিত অর্থও ব্যাংকে আসতে শুরু করেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চের শেষ দিকে লকডাউন শুরু হয়। আর এপ্রিল থেকে ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে পড়েন। নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন অনেকেই। চলমান ব্যবসাও অনেকে বন্ধ করে দেন। আবার কেউবা ব্যবসা ছোট করেন।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, করোনার মধ্যে প্রবাসী আয় অনেক বেশি এসেছে। এসব টাকার বড় অংশ ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা হয়েছে। আগে যারা সঞ্চয় করেননি, তারাও করোনাকালে সঞ্চয় করতে শুরু করেছেন। আসলে করোনা সবাইকে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়ার কারণেই সঞ্চয়ের প্রবণতা ও পরিমাণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। গত ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। সোনালীর পেছনে রয়েছে অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক।

বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। জানুয়ারি শেষে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকটিতে আমানত ছিল ৯৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের পরিমাণ ৪৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপরই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৪৩ হাজার ১৫৮ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।

অন্যদিকে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যস্থিতিতে। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে হয়েছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …