এবারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো ছিল। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সে বিষয়ে তারা যতেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। নির্বাচনের শুরু থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছিলেন।
নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য কূটনৈতিকরা তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে মতামত দিয়েছেন। যদিও এটি জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচন। আর এই স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিকদের এমন আগ্রহ নজিরবিহীন এবং অযাচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।
হঠাৎ করেই স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিকদের এমন আগ্রহ কেনও তৈরি হলো? তা নিয়েই অনুসন্ধান। অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রশ্ন জাগলো মনে, তাহলে কী বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? নাকি ড. কামাল হোসেন এই কূটনৈতিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য উৎসাহিত করেছেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনলাইনে ঘেটে পাওয়া গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ৫টি প্রভাবশালী দেশে যে সমস্ত বাঙ্গালি কর্মকর্তারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশ আগে জামাত-শিবির করতো, এক পর্যায়ে তারা রাজনীতি থেকে সরে দূতাবাসগুলোতে চাকরি নিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি দূতাবাসেই ডিপ্লোম্যাটদের বাইরে ওইদেশের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দূতাবাসগুলোতে বাঙ্গালিরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ সমস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনের যোগাযোগ রয়েছে। তাই রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানেন। এ কারণে দেশের বাহিরের লোকদেরও দূতাবাসগুলোতে চাকরি দেওয়া হয়।
মার্কিন দূতাবাসে সিনিয়র পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট বলে একটি পদ রয়েছে, যেখানে
বাঙালিদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে
ডিপ্লোম্যাটদেরদের পরামর্শ দেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সার্বক্ষণিক বিষয়গুলো
নজরে আনেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মার্কিন দূতাবাসে সিনিয়র পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট পদে একজন বাঙালি কর্মকর্তা চাকরি করেন। যিনি একসময় ইসলামী ছাত্রশিবির করতেন এবং একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের মালিকানাধীন টেলিগ্রাফ পত্রিকাতে কাজ করতেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি এবং জামাতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তার। বর্তমানে তিনি মার্কিন ডিপ্লোম্যাটদের জামাত এবং বিএনপির পক্ষে সহানুভূতিশীল করতে, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক দিকসমূহ গুরত্বসহকারে তুলে ধরেন।
এদিকে বিট্রিশ হাইকমিশনেও একজন অ্যানালিস্ট রয়েছেন, যিনি ব্রিটিশ দূতাবাসেও
সরকারবিরোধী প্ররোচনা চালান। তাদের জন্য দূতাবাসে হাইকমিশনারেরা ভুলবার্তা
পাচ্ছেন। সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক বার্তা ও জনগণের মনোভাব
সম্পর্কে বিএনপি-জামাতের প্রেসক্রিপশনে তাদের তথ্য উপাত্ত দেওয়া হচ্ছে।
কানাডা দূতাবসেও একজন বাঙালি কর্মকর্তা কাজ করেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে রয়েছেন। তিনিও একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনিও দূতাবাসে সরকারের বিষয়ে ভুল বার্তা দিতেন। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ডিপ্লোম্যাটদের প্ররোচিত করতেন তিনি। এসব তথ্যউপাত্তগুলোর ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনে বিএনপির বি-টিম হিসেবে কাজ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন কূটনৈতিকরা!
তবে কূটনৈতিক মহল মনে করেন, যে দূতাবাসগুলোতে দেশিয় কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে
তাদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। যারা নিয়োগ পাচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক
পরিচয় অনুসন্ধান করা জরুরি বলে মনে করেন কূটনৈতিক মহল।
কূটনৈতিক মহল থেকে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে দূতাবাসগুলোতে যে ধরণের পদক্ষেপ
নিয়ে বার্তা দেওয়া হচ্ছে তা শুধু একপক্ষের লাভের জন্যই করা হচ্ছে!
দূতাবাসে চাকরিরত যারা তাদের পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ওই দেশগুলোর
সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন এবং সম্পর্কের অবনতি হবে। সেই সঙ্গে
দূতাবাসের যে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে তার চরম শিখরে পৌঁছে যাবে বলে মনে
করছেন তারা। যার একটি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এবারের ঢাকার দুই সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচনে।