নিউজ ডেস্ক:
সব আইনের মূল সংবিধান। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। যা কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) থেকে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে সংবিধান দিবস। এবার থেকে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ‘ক’ ক্রমিকে পালিত হবে। অর্থাৎ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। প্রতিটি অনুচ্ছেদের বক্তব্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ এক একটি অনুচ্ছেদ কোনও একটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশক অভিব্যক্তি। কিন্তু সংবিধানে এমন কিছু কিছু অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলো অন্যান্য অনুচ্ছেদের সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হয়। তবেই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের অর্থটি অধিকতর পরিষ্কার হয়ে ধরা পড়ে। যেমন- সংবিধানের প্রস্তাবনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সম্পূর্ণ সংবিধানের।
বলা হয়, প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের সারবস্তু। সংবিধান প্রণয়নের আদর্শিক উদ্দেশ্যগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকে প্রস্তাবনায়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক মামলায় প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন উঠেছিল প্রস্তাবনা সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ কি না? সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রস্তাবনাকে সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রস্তাবনায় মূলত সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয় এবং অনুচ্ছেদগুলো সেসব উদ্দেশ্য অর্জনের প্রায়োগিক নির্দেশনার বিস্তারিত বিবরণ থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়; সংবিধানে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা উল্লেখ করা আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সব ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’
এ যাবৎকালে বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংবিধান দিবস বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সংবিধান প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তীতে ৪ নভেম্বরকে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস ও সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।