নিউজ ডেস্ক:
বিদ্যমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ও দীর্ঘ মেয়াদে জ্বালানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চলতি বছর ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে পরিবহণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ভোলা থেকে বরিশাল, পরে কুয়াকাটা-খুলনা-গোপালগঞ্জ হয়ে পাইপ লাইন যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। এদিকে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন নির্মাণের একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এর আগে গত বছর জ্বালানি সংকট তীব্র হলে কম্প্রেস পদ্ধতিতে সিএনজিতে রূপান্তর করে শাহবাজপুর থেকে ঢাকায় গ্যাস আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় ওই প্রকল্প সফল হয়নি। পরে শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থের পর ইলশা গ্যাস ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ আবিষ্কারে তা পরিবহণে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। কারণ ডলার সংকট ও আমদানি গ্যাসের উচ্চমূল্য এবং স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিল।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের ঘাটতি ১ হাজার ৫শ’ এমএমসিএফডি ছাড়িয়েছে। যদি নতুন গ্যাসের উৎস অনুসন্ধান না করা যায় তাহলে ২০২৫ সালে যা ৩ হাজার ৯০৩ এমএমসিএফডি এবং ২০৩০ সালে ৫ হাজার ৫৮৭ এমএমসিএফডি হতে পারে।
যদিও এই ঘাটতি মেটাতে বড় পরিসরে আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য আমদানিকৃত এলএনজি খালাসের ও মজুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ও স্টোরেজ নির্মাণের চুক্তিও করে সরকার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রম্নপের সঙ্গে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি করার পর প্রশ্ন ওঠে ভোলার বিপুল পরিমাণ গ্যাস কেন জাতীয় গ্রিডে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ ভোলার গ্যাস পরিবহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। সম্প্রতি দেওয়া এই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপলাইন ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড এবং ভোলা নর্থ গ্যাস ফিল্ড হয়ে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করবে। পরে যা
কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা নাজমা ইসহাক জানান, সরকারের ইচ্ছাতেই ভোলার গ্যাস পরিবহণে জিটিসিএল একটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমতি দিলে কাজ শুরু হবে।
সংস্থাটির তথ্যনুযায়ী. প্রাথমিকভাবে ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে ব্যয় হবে ১২৩ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা। এই অর্থের ৫৩ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন বা ৪৩ শতাংশের জোগান উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। তবে প্রকল্পটি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সম্ভাব্য যাচাই করা হয়নি। তাই গ্যাস জিটিসিএল আগে একটি গবেষণার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সব নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) তথ্য অনুযায়ী, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৬৩৯ দশমিক ১২ বিলিয়ন ঘনফুট; এর মধ্যে গেল বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা হয়েছে। ক্ষেত্রটিতে এখনো প্রায় ৫১৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে।
এ ছাড়া ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানে ৪৩৫ দশামক ৩২ বিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে উভয় গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট, যার মধ্যে প্রতিদিন ৬৬ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট ভোলা এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে ভোলার জেলায় টগবি-১, ভোলা নর্থ-২ ও ইলিশা-১ গ্যাসকূপে খনন কাজ চলছে। সেখানে আরও গ্যাসের মজুদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই পাইপলাইন নির্মাণ করা হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।