নিউজ ডেস্ক:
জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ, তাৎপর্যপূর্ণ অবদান ও ফলপ্রসূ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করলেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) সাবা কোরোসি। জাতিসংঘ সদর দফতরে গত শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় আলোচনাকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এ প্রশংসা করেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি। সভার শুরুতে ‘এসডিজি বাস্তবায়ন রিভিউ’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট আয়োজন এবং সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের আওতাধীন উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থ, পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি ফোরাম প্রতিষ্ঠা-এ দুটি প্রস্তাব সাধারণ পরিষদের সভাপতির কাছে পেশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। এসডিজির বাস্তবায়ন, বিশেষ করে কভিড-১৯ এর মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রস্তাবিত উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টটির আয়োজন করা হলে তা এসডিজির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং তহবিল ঘাটতি মোকাবিলায় ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন (এসএসসি) এর আওতায় মন্ত্রী পর্যায়ের ওই ফোরাম এসএসসির বিষয়ভিত্তিক আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিতে একটি চমৎকার প্ল্যাটফরম তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ পরিষদের সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কভিডের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণ পরিষদের সভাপতি জিডিপির প্রবৃদ্ধি, কভিড মোকাবিলাসহ বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে আলোচনাকালে রোহিঙ্গা শিশুদের নিজ ভাষায় শিক্ষাদান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কভিড ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফেরত যায়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ সংকট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে মন্তব্য করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য আরও তহবিলের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা শিগগিরই বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণ পরিষদের সভাপতি বিষয়টির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। সুবিধাজনক যে কোনো সময়ে সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের পিস অপারেশনে সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ), বেজ? ডিফেন্স কন্টিনজেন্ট, পদাতিক কন্টিনজেন্ট এবং পুলিশ কন্টিনজেন্ট পদায়নের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ হতে সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিশেষ করে ফোর্স কমান্ডার নিয়োগের জন্যও আহ্বান জানান এবং নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা ও পেশাগত দক্ষতার প্রসংশা করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ হতে সুদানের আবেইতে পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রেরণ, মালিতে আর্মড হেলিকপ্টার এবং কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স কন্টিনজেন্ট মোতায়েন, মধ্য আফ্রিকায় হাসপাতাল ইউনিট প্রেরণ এবং কঙ্গোতে এক্সপ্লোসিভ অর্ডিনেন্স ডিসপোজাল (ইওডি) কন্টিনজেন্ট মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।