নিউজ ডেস্ক:
দেশের সব জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ছয়টি মৌজায় কৃষিজমি, নিম্নভূমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশের জমি ভরাট করে ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছর ২ ডিসেম্বর এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ১৩২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে দেশের সব জলাভূমি রক্ষায় ১১টি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে জলাভূমিকে রাষ্ট্রের সম্পত্তি (পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি) ঘোষণা করা হয়েছে। জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় পৃথক আইন প্রণয়নও করতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাভূমি রক্ষার ওপর প্রতি দুই মাস পরপর এক ঘণ্টার ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে পরিবেশবান্ধব উন্নত দেশ গড়তে ১৪টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন হাইকোর্ট। নবায়নযোগ্য জ্বালানি আইন প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে কমিশনও গঠন করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের সব সড়কে সাইকেল লেন তৈরির নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, এটি দেশকে উন্নত করবে। সেসঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ বন্ধেও মত এসেছে রায়ে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার রক্ষায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করতেও মত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর দেশে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারকে পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছে।
দেশকে পরিবেশবান্ধব করতে এ রায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্নিষ্ট সব সরকারি অফিসে দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার কৃষিজমি, নিম্নভূমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশের জমি ভরাটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ওই বছরের ২ মার্চ প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালু ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছর ২ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সোনারগাঁয়ে ইউনিক প্রপার্টিজের অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করে ছয় মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, রায়ে ভূমি দস্যুতা, কৃষিজমি ও জলাভূমি রক্ষায় একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন আদালত। এটি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এবং কৃষকের আইনগত স্বার্থের পক্ষে একটি যুগান্তকারী রায়।
আদালতে এই রিট মামলায় বেলার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপরপক্ষে ছিলেন মুরাদ রেজা, আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।
আরও দেখুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …