বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়টি সমগ্র বিশ্বে একটি স্বীকৃত সত্য। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈশ্বিক তাপমাত্রার যে চিত্র আমরা দেখতে পাই, সে অনুযায়ী গত ১০০-১৫০ বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রীর কাছাকাছি। এই তাপমাত্রা যদি ৩-৪ ডিগ্রি বেড়ে যায় তবে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসবে। এখনি যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে ও ঝুঁকি বাড়বে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উপকূলবর্তী যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত ও হুমকির সম্মুখীন, বাংলাদেশ তার একটি।সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে প্রায় ক্ষতির পরিমাণ ২শ’ ৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর আগেও বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আইলা, নার্গিস সহ অনেক ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বৈষয়িক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গ্রহণের পর সরকার কর্তৃক ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯ (বিসিসিএসএপি, ২০০৯) চূড়ান্ত করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিসিসিএসপি ২০০৯ এ বর্ণিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশের অর্থ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা না করে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরণের তহবিল গঠন বিশ্বে প্রথম যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত করেছে বাংলাদেশকে। ট্রাস্ট ফান্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহিষ্ণু প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন। দেশ ও দেশের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য মহান জাতীয় সংসদে এ ধরনের একটি আইন পাশ করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন ও এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
সম্প্রতি জলবায়ু মোকাবেলা শীর্ষক এক সেমিনারে ফ্রান্স ন্যাশনাল পার্লামেন্টের সদস্য ও ফ্রান্স বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল ওবোনোকে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অভিযোজন অভিজ্ঞতা থেকে ঝুঁকির মুখে থাকা রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা নিতে পারে বলে উল্লেখ করেন।