নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আশার খবর হচ্ছে, জর্দান বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার পোশাক কর্মী নিয়োগ দেবে। এই কর্মীরা আগামী বছরের শুরুর দিকে জর্দানে চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে সম্প্রতি জর্দানের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক কারখানা ‘ক্লাসিক ফ্যাশনের’ চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সানাল কুমার সৌজন্য সাক্ষাত করে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা বিশ্বজুড়ে একটা স্থবিরতা এনে দিয়েছে। এমন অবস্থা কবে শেষ হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফলে গোটা বিশ্বেই শ্রমবাজারগুলোও স্থবির হয়ে পড়েছে। কোথাও শ্রমবাজার খোলা নেই। এমন এক সময় জর্দানের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা ক্লাসিক ফ্যাশন থেকে ১২ হাজার কর্মী নিয়োগ করার ঘোষণা একটা আশা জাগিয়েছে। জর্দানের ওই প্রতিষ্ঠানের ২৬ হাজার কর্মীর মধ্যে ১৬ হাজার কর্মীই বাংলাদেশের। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে আগামী বছরের শুরুর দিকে আরও ১২ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে। ভবিষ্যতে আরও বেশি কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্লাসিক ফ্যাশনের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সানাল কুমার। তিনি বাংলাদেশের কর্মীদের মেধা, শ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠা জর্দানে অধিক সংখ্যক কর্মী নিয়োগের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড-১৯ শুধু আমাদেরই নয় বিশ্বব্যাপী একটি অপ্রত্যাশিত মহামারী। যাতে আক্রান্ত হয়েছে প্রতিটি খাত। কোভিডের কারণে অভিবাসন খাতে সঙ্কট তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই খাতের সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলে সরকারী চেষ্টার বাইরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে কাজ করে এই খাতের সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। তাহলেই আমরা কার্যকরভাবে কোভিড মোকাবেলা করতে পারব। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে কর্মী নিয়োগ বেড়ে যাবে। তখন আমাদের সবার চেষ্টায় এই খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। একযোগে কাজ না করলে বিদেশে কর্মী পাঠানো নিয়ে আমাদের বেগ পেতে হতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনা মোকাববেলায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। অভিবাসী কর্মীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের পরিবার যাতে কোন প্রকার অসুবিধায় না থাকেন সেজন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। অপ্রত্যাশিত কোভিড শুরু হওয়ার পর সামনে মূলত পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম যারা বিদেশে আছেন তারা কীভাবে সেখানে ভালভাবে থাকতে পারেন, চাকরির নিশ্চয়তা পেতে পারেন। দ্বিতীয়ত যারা ফিরে আসতে চাচ্ছেন তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কিভাবে নিশ্চিত করা যায়। তৃতীয়ত যারা ফেরত এসেছেন তাদের কিভাবে আবার পাঠানো যায় এবং চতুর্থত যারা দেশেই থাকবেন তাদেরকে কীভাবে সমাজে পুনর্প্রতিষ্ঠা করা যায়। সর্বশেষ, নতুন করে কিভাবে আবার বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু করা যায়। কিন্তু সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ফলোআপের প্রেক্ষিতে স্মার্টকার্ডধারী বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সরকারী হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্ট ফি দুই ধাপে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৩ শ’ টাকা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি চলমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। স্মার্টকার্ডধারী বিদেশগামী কর্মীদের কোভিড-১৯ টেস্ট ফি দুই ধাপে ৩ হাজার ৫ শ’ টাকা দিতে হতো। এখন থেকে এই ফি ৩ শ’ টাকায় নামিয়ে নিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে ছুটিতে আসা কর্মীদের জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা ছুটি শেষে নিজ কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন অনেক কর্মী।