নিউজ ডেস্ক:
ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনে যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ও পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এ ঘটনার সুবিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের এই সংকটে দেশটিতে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতি অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের কাছে ফিলিস্তিন কৃতজ্ঞ বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (সোমবার) সকালে ফোন দিয়ে আমাদের প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ শিগগিরই ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কয়েক হাজার ইমেইল বার্তা ও ফোনকল পেয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেকেই আমাদের জন্য নগদ অনুদান দিয়ে বন্ধুত্বের নিদর্শন প্রমাণ করেছেন। আবার অনেকেই অনুদান দেওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাই আমরা আমাদের ফেসবুক পেজে কিছু নম্বর ও তথ্য দিয়েছি, যেন সহযোগিতা আগ্রহী ব্যক্তিরা সহজে সহায়তা করতে পারেন।
আরব বিশ্বসহ বিশ্বের সব দেশের কাছে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন, সহযোগিতা ও দোয়া চাই— এমন মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান বলেন, ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনে যে হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার বহির্ভূত অপকর্ম করছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তারা ১৭ বছর ধরে শিশুদের হত্যা করছে, মসজিদে নামাজরত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, সাধারণ ও নিরীহ নাগরিকদের আক্রমণ করছে, ফিলিস্তিনে তারা ধ্বংসলীলা ঘটাচ্ছে। তাদের কারণে আমি ২১ বছর ধরে আমার প্রিয় জন্মভূমিতে যেতে পারি না।
ফিলিস্তিনের বর্তমান সংকট উত্তরণে বৈশ্বিক সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান। তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সব বৈশ্বিক সংগটনসহ বিশ্বের সবার কাছে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও দোয়া চাই। ইসরাইলি নারকীয় বাহিনী ফিলিস্তিনের মাটিতে যে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে, তা দৃশ্যমান। ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, সেটি বিশ্ববাসী দেখছে। তারা ফিলিস্তিনের জনগণের ঘরবাড়ি অবৈধভাবে দখল করে তাদের বাস্তুচ্যুত করছে। ফিলিস্তিনের জনগণ বিশ্ববাসীর কাছে এই জঘন্য ঘটনার বিচার চায়।
ফিলিস্তিনের এই সংকটকালে দেশটিকে সমর্থন নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসরাইলি হামলায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি পাঠান তিনি। শেখ জারাহ থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে সেই এলাকা দখল করে ইসরাইলি বাহিনী মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন করেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, গত রোববার এই ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছে মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি। বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জাতিসংঘকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে, তা বিশ্বের কোনো আইনেই মেনে নেওয়া যায় না। ইসরাইলের এই হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনতিবিলম্বে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত। বিশ্বের শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করতে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি ধ্বংসলীলার বিষয়ে কয়েকটি দেশের বাধার কারণে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত। তাই তারা কিছু করতে পারছে না। বিশ্বের কয়েকটি দেশের বাধার কারণে জাতিসংঘ শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বিশেষ করে ইসরাইলি বাহিনীকে সহযোগিতা ও সমর্থন করে যাচ্ছে আমেরিকা। তাদের সহায়তা নিয়েই ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে ইসরাইল।