সমালোচনার মুখে জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর আদায় পদ্ধতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদ্যমান এলাকাভিত্তিক উৎসে কর হারের পরিবর্তে মৌজা ও শ্রেণিভিত্তিক (আবাসিক, বাণিজ্যিক, রিয়েল এস্টেট বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকৃত জমি) কর আদায় করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এতে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচ কমবে। এ ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন পদ্ধতিতে জমির ৫টি শ্রেণি করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-শ্রেণি-ক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা (জমি বা প্লট)। শ্রেণি-খ : ‘ক’ শ্রেণিতে উল্লেখ করা আবাসিক এলাকা। শ্রেণি-গ : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়; কিন্তু ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকা। শ্রেণি-ঘ : ‘গ’ শ্রেণিতে উল্লেখ করা আবাসিক এলাকা। শ্রেণি-ঙ : ক, খ, গ, ঘ শ্রেণি ব্যতীত অন্য সব এলাকা। অর্থাৎ দেশের পৌরসভা ও প্রত্যন্ত এলাকার জমি বা প্লট।
এছাড়া মৌজাভিত্তিক পৃথক উৎসে কর হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার সব মৌজার জমি কেনাবেচায় শ্রেণিভিত্তিক হারে উৎসে কর দিতে হবে। ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, বংশাল, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানা। খিলক্ষেত, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা মডেল থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, চকবাজার থানা, কোতোয়ালি থানা, লালবাগ থানা, খিলগাঁও, শ্যামপুর, গেণ্ডারিয়া থানার সব মৌজা। বিমানবন্দর, উত্তর-পশ্চিম মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা থানা, পল্লবী থানা, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর মডেল থানা, দারুসসালাম থানা, দক্ষিণখান থানা, উত্তরখান থানা, তুরাগ থানা, শাহ আলী থানা, সবুজবাগ থানা, কদমতলী থানা, কামরাঙ্গীরচর থানা, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর থানা, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও কালীগঞ্জ থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানার সব মৌজা।
এছাড়া আরও আছে-চট্টগ্রাম জেলার খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানার সব মৌজা, গাজীপুর জেলার সদর, বাসন, কোনাবাড়ী, গাছা, টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম থানার সব মৌজা। ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই উপজেলার সব মৌজা, চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী, চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, বন্দর, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামি ও সদরঘাট থানার সব মৌজা এবং নারায়ণঞ্জের আড়াই হাজার থানার সব মৌজা।
এছাড়া জেলা সদরের ভেতরে অবস্থিত পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজা, জেলা সদরের বাইরে পৌরসভা এলাকার অন্তর্গত মৌজা এবং পৌরসভা ব্যতীত অন্য সব এলাকার জন্য পৃথক উৎসে কর হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। একইভাবে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মৌজা ও শ্রেণিভিত্তিক বর্গমিটারপ্রতি উৎসে কর নির্ধারণ করা হচ্ছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ক থেকে ঘ শ্রেণিতে উল্লেখ করা জমিতে স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস থাকলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৮০০ টাকা অথবা দলিলমূল্যের ৮ শতাংশ যেটি অধিক, সেই হারে বাড়তি উৎসে কর দিতে হবে। এছাড়া ‘ঙ’ শ্রেণির জমিতে স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস থাকলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৫০০ টাকা অথবা দলিলমূল্যের ৬ শতাংশ যেটি অধিক, সেই হারে বাড়তি উৎসে কর দিতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় দলিলে লিখিত মূল্যের এক শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, এক দশমিক ৫০ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক, এলাকাভেদে স্থানীয় সরকার কর ২-৩ শতাংশ এবং রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) অন্তর্ভুক্ত এলাকার আয়কর আইনের তফসিল অনুযায়ী উৎসে কর দিতে হয়। পুরোনো আয়কর আইনে এলাকাভিত্তিক দলিলমূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর অথবা কাঠাপ্রতি ছিল। গত জুনে জাতীয় সংসদে পাশকৃত নতুন আয়কর আইনে এটি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। এতে গত দুই মাসে জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়। এ কারণে জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের উৎসে কর পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত জমি কেনাবেচার সময় বিক্রেতার পক্ষে জমির ক্রেতা উৎসে করসহ যাবতীয় কর পরিশোধ করে থাকেন।
সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক জমি হোক বা আবাসিক-বর্তমানে এলাকাভেদে জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর আদায় করা হয়, যা যৌক্তিক নয়। বিদ্যমান পদ্ধতিতে জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে সরকার কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব না পাওয়া এবং এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় উৎসে কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।