শনিবার , নভেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / গুরুদাসপুর / জমকালো আয়োজনে শেষ হলো ৬৮তম মেয়ের বিয়ে

জমকালো আয়োজনে শেষ হলো ৬৮তম মেয়ের বিয়ে

নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর:
‘কখনও কখনও স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেয়। আমি অতি সাধারণ একজন কৃষক। স্ত্রী, মেয়ে ও দুই সন্তান নিয়ে আমার সংসার। অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও সারাদিন অন্যের জমিতে পরিশ্রম করে রাতে বাড়িতে শুয়ে শুয়ে ভাবতাম, মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। অনেক ধুমধামে মেয়ের বিয়ে দিবো আমি। এদিকে দিনমজুরীর টাকায় সংসার চলে কোনমতে। অন্যদিকে মেয়ের বিয়ের বয়সও হয়েছে। অর্থের অভাবে মেয়ের বিয়ের আয়োজনও করতে পারছিলাম না। কখনও ভাবিনি আমার মত একজন কৃষকের মেয়ের বিয়ে এত ধুমধামে সম্পুন্ন হবে। গভীর রাতে মেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে। আজ বুঝলাম, যার কেউ নেই তাঁর আল্লাহ আছেন।’ শুক্রবার দুপুরে বগুড়া সদর উপজেলার বিদুপাড়া গ্রামের বিয়ের আসরে কথাগুলো বলছিলেন কৃষক মাফুজার রহমান।

জমকালো আয়োজনে দরিদ্র কৃষক মাফুজার রহমানের মেয়ে মোছাঃ মাকছুদা খাতুন (২২) এর বিয়ের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ৬৮ জন গরীব অসহায় এতিম মেয়ের বিয়ে দিলেন ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেল।

জমকালো আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিলনা অনুষ্ঠানে। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় ৩০০ জন।

স্থানীয়রা জানান, মাহফুজার রহমান একজন কৃষক। তিনি দিনমজুরী করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছিলেন। টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন মাহফুজার রহমান ও তার স্ত্রী বাসেদা বেগম। মেয়েকে মকতবে পড়িয়েছেন কৃষক মাহফুজার। সপ্তাহ খানেক পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে স্থানীয়রা বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেলের সন্ধান দিলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কৃষক মাহফুজার। কৃষকের দুঃখ কষ্টের কথা শুনে বিয়ে দিন-তারিখ ঠিক করতে বলেন রুবেল।

শুক্রবার দুপুরে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ব্যাপক জমকালো আয়োজন দেখা যায়। চলছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য রান্নার আয়োজন। একটি কক্ষে দেখাযায় কনেকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত একজন বিউটিশিয়ান। ইতিমধ্যেই বরের জন্য প্রস্তুত মঞ্চ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়ল বরযাত্রীরা। বর বগুড়া সদর উপজেলার বিদুপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিজু হোসেন (২৬)। তিনি স্থানীয় একটি বাজারে ব্যবসা করেন। বরকে উন্নতমানের উপহারের মাধ্যমে বরণ করেন ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেল।

কনে মাকছুদা খাতুন জানায়, তার বাবা-মা তাকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন। মকতব পর্যন্ত পড়াশোনাও করিয়েছেন। বাবা’র মতই আরও একজন মানবিক মানুষ এগিয়ে এসে তার বিয়ে এত সুন্দর ভাবে শেষ করার জন্য রুবেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

আবেগ আপ্লুত হয়ে কৃষক মাহফুজার রহমান জানালেন, কখনও ভাবেননি তাঁর মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

রুহুল আমীন রুবেল বলেন, ‘মহান আল্লাহর কৃপায় এ পর্যন্ত আমি ৬৮টি মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছি। শুক্রবার শেষ হয়ে আমার ৬৮তম মেয়ের বিয়ে। আনুমানিক দুই সপ্তাহ পুর্বে ৬৭তম মেয়ের বিয়ে সম্পুন্ন হয়েছিলো। (৭ জুলাই) মাকছুদার বিয়ে সুসম্পন্ন হলো। ২০০৫ সাল থেকে আমার এই যাত্রা শুরু। গরিব, অসহায়, এতিম মেয়েদের বিয়ের পাশাপাশি সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার আমার নিজ এলাকার দুস্থ্য মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছি সাড়ে ১৭ বছর ধরে। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদ, বিশেষ দিনসহ বিভিন্ন সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করি।’
তিনি আরও বলেন,‘আমার বাবা মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার বেঁচে থাকাকালীন এসব কার্যক্রম করেছেন। মানুষকে ভালোবেসেছেন। আমি আমার বাবার আদর্শ নিয়ে চলি।’
তিনি মনে করেন, সমাজের বিত্তবানরা তাদের আশপাশের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ালে হাজারো মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আরও দেখুন

বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ

নিউজ ডেস্ক,,,,,,,,, সাংস্কৃতিক কূটনীতির একটি প্রাণবন্ত প্রদর্শনে, ঢাকা-ভিত্তিক বিখ্যাত নৃত্য বিদ্যালয় ‘কল্পতরু’ র নয় সদস্যের …