নিউজ ডেস্ক:
বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া শতভাগ অনলাইনভিত্তিক হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানিতে হয়রানি কমাতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ডিজিটাল প্রক্রিয়া শুরু হলে কর্মীরা দ্রম্নত বিদেশ যেতে পারবেন, সেইসঙ্গে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়বে। তবে এখনো প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক না হওয়ার কারণে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমন সুযোগে টু-পাইস কামিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঢাকার কাকরাইল বিএমইটি ভবনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিদেশগামী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। শরীফ নামের একজন বলছিলেন, তিনি আগে সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর চাকরি করেছেন। করোনা মহামারির আগে দেশে এসে আর যেতে পারেননি। তিনি আবার বিদেশ যেতে চান। এজন্য তিনি সরকারের চালু করা প্রবাসী অ্যাপসের মাধ্যমে প্রায় সব কাজই শেষ করেছেন। সব কাগজপত্র গ্রহণও করেছেন। শুধু কাগজপত্রের সত্যায়ন বা অ্যাটাসটেশন কপি অনলাইনে নিচ্ছে না। এই প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হলে বিদেশগামীদের ভোগান্তি অনেক কম হবে। দ্রম্নত বিদেশ যাওয়া সম্ভব হবে। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, যাদের ঢাকায় থাকার মতো তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই তাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। তাদের হথাকতে হচ্ছে সস্তা মানের আবাসিক হোটেলে। অর্থ এবং সময় দু’টিই যাচ্ছে। নানাভাবে হয়রানির শিকারও হচ্ছেন বিদেশগামীরা। এসব কাজ করতে অনেক সময় বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক করার নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, কোন দেশ যে পরিমাণ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেবে, তার সংখ্যা ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে। দূতাবাস বাংলাদেশের বৈধ এবং সরকারের তালিকাভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি অথবা সরকারিভাবে বিএমইটি’র মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী জনবল চায়। এরই প্রেক্ষিতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দূতাবাসগুলোতে কর্মীদের যাবতীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করে। দূতাবাস আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে। এর একটি প্রতিবেদন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় তারই ভিত্তিতে জনশক্তি রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে। সূত্রটি বলছে, অনুমোদনের বিপরীতে কর্মীর চাহিদাপত্র বা ডিমান্ড লেটার তৈরি করা হয়। সেই চাহিদাপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশস্থ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহ করে বিদেশ পাঠায়। এর আগে নির্বাচিত কর্মীদের পেমেন্ট দিতে হয়। পেমেন্ট বা অর্থ প্রদান পদ্ধতিসহ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ম্যানুয়াল। অর্থ প্রদান থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদান পদ্ধতি অনলাইনভিত্তিক না হওয়ার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিএমইটি সূত্র বলছে, সরকারের তরফ থেকে বিদেশি চাকরিদাতাদের সঙ্গে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সরাসরি যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই। এতে করে বিদেশি কোম্পানিগুলো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে সরাসরি জনবল নিতে পারে না। এই প্রক্রিয়াটি সহজ করতে পুরো পদ্ধতি অনলাইনভিত্তিক করার চেষ্টা চলছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংসস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই এই প্রক্রিয়াটি সহজতর করার চেষ্টা চলছে। পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাইলজড করা সম্ভব হলে দ্রম্নত কর্মীরা বিদেশ যেতে পারবেন। ভোগান্তি কম হবে। বিদেশগামীদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগও কমে আসবে। এমন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ‘আমি প্রবাসী’ নামে অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কর্মী পর্যায়ে বিএমইটি ডাটাবেজ রেজিস্ট্রেশন, ট্রেনিং ও ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। অভিবাসন পদ্ধতিকে আরও সাশ্রয়ী, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে ইতোমধ্যেই ‘ওয়ান-স্টপ-সলিউশন’ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে বিএমইটি ভবনের নিচতলায়। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক হলে একজন কর্মী তার যোগ্যতা অনুযায়ী ঘরে বসেই অনলাইনেই অ্যাটাসটেশন বা সত্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে দিতে পারবেন আবেদন ফি। অনলাইনেই বিদেশি নিয়োগকর্তা বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। নিয়োগকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্মী বাছাই করতে পারবেন। সূত্রটি বলছে, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি কর্মী অন্য কোনো দেশে ভালো চাকরি নিয়ে যেতে চাইলে তাকে পুনরায় দেশে ফিরে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু অনলাইনভিত্তিক হলে ওই কর্মীকে আর দেশে ফিরে আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। বিদেশে বসেই তিনি অন্য দেশে ভালো বেতনের চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) এ এইচ এম আনোয়ার পাশা বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসী কর্মীদের অধিকতর কল্যাণ ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে কাজ চলছে। বিশ্ব বাজারের চাহিদারভিত্তিতে কর্মপ্রত্যাশীদের সুরক্ষা, অধিকতর কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরো কাজ করে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে পুরো প্রক্রিয়াটিই অনলাইনভিত্তিক করার চেষ্টা চলছে। যাতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়।