নিউজ ডেস্ক:
প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আইন ও প্রশাসন কোর্স থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সময়োপযোগী উন্নয়ন প্রশাসন গড়ে তুলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনারা নিবেদিত থাকবেন, জনগণের পাশে থাকবেন। মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ১১৯ ও ১২০তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শাহবাগে অবস্থিত বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমি মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাকালীন মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের চালু করা ভার্চুয়াল কোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এর লক্ষ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে আইনের সেবা দেওয়া, বিচারব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখা, বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে। কারণ আমি তার ভুক্তভোগী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর বিচার যাতে না হয় সে জন্য ইনডেমনিটি (অর্ডিন্যান্স জারি) দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ বিচারের হাত থেকে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের (১৫ই আগস্ট স্বজনহারাদের) কোনো অধিকার ছিল না একটা মামলা করার বা বিচার চাওয়ার।’
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর সরকার সেই কালো আইন বাতিল করে এবং পরবর্তী সময়ে খুনিদের বিচার সম্পন্নসহ বিচারের রায়ও কার্যকর করতে সমর্থ হয়, বলেন তিনি।
সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে বিচারাধীন এবং কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেওয়াটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে তাঁর সরকার সেই বিচার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং অনেকেরই দণ্ড কার্যকর হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিচারের বাণী যেন আর নিভৃতে না কাঁদে। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায়। আর মানুষ যাতে প্রশাসনের সেবা পায়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বক্তব্য দেন। প্রতিষ্ঠানের রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন স্বাগত বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নিজেকে জনগণের একজন সেবক হিসেবে দেখেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার দায়িত্ব জনগণের সেবা করা।’ তিনি নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাছেও আমি এটা চাই, আপনারা জনগণের সেবক হিসেবেই কাজ করবেন। কারণ আজকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্বায়নের যুগে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সম্মিলিতভাবে দেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা সার্বক্ষণিকভাবে জনগণকে সেবা প্রদানে বাধ্য। আমি আশা করি, আপনারা এই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই আপনারা সেইভাবে আপনাদের কাজে নিজেদের নিবেদিত করবেন। জনসেবায় এবং নাগরিক সেবায় উদ্ভাবন ও সেবাবান্ধব প্রশাসন গড়ে উঠুক—সেটাই সকলের কাম্য।’
‘৪১ সালে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, সেই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের পর আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় আজকের নবীন কর্মকর্তাদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা থাকবেন সেই ৪১-এর সৈনিক। সেভাবে আপনাদের তৈরি হতে হবে, কাজ করতে হবে। আর ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব আমরা। সেই শতবর্ষ উদযাপনেও বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি।’
‘অর্থাৎ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ সুন্দর জীবন পেতে পারে, আমাদের মতো কষ্ট ভোগ করতে না হয়, সে জন্যই আমাদের এই পরিকল্পনা’, বলেন তিনি।
মাঠ প্রশাসনে জনগণের সেবা করার যে অবারিত সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগানোরও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি হলো দক্ষ এবং দূরদর্শী সিভিল সার্ভিস। কারণ আমরা নির্বাচিত হয়ে আসি পাঁচ বছরের, স্বল্প সময়ের জন্য। আপনারা দায়িত্বে থাকেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। তাই একটি আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগোতে হবে।’