নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুজিবনগর থেকে ভারতের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত সড়ককে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ব্যাপারে যৌথ ঘোষণা দিতে পারেন।
দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৭ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল সংলাপে বসছেন। ওইদিন যৌথ ঘোষণার পর সড়কটিকে দু’দেশের জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মার্চে মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল হলে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেননি। এখন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল সংলাপ করছেন।
এ ব্যাপারে দু’দেশই এখন প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে বাংলাদেশ। বছরটি বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ৫০ বছর পূর্তির বছর। দুই দেশ যৌথভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে। ভার্চুয়াল সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশের তরফে সীমান্ত হত্যা, ভারতের ঋণের বাস্তবায়নের অগ্রগতি, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, অশুল্ক বাণিজ্য বাধাসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সংলাপে তোলা হতে পারে।
অপরদিকে ভারতের তরফে ফেনী নদীর ওপর সেতু উদ্বোধন, রেল ও সড়ক পথে দু’দেশের মধ্যে সংযোগকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি জোর দেয়া হতে পারে।
এ ছাড়া ভার্চুয়াল সংলাপের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সীমিত অর্থায়নে ছোট ছোট কার্যক্রম উদ্বোধন করা হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি সরকার। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় অস্বস্তি আছে। ভার্চুয়াল সংলাপে এর বিষয় ছায়া পড়ার আশঙ্কা থাকলেও আলোচনায় বিষয়টি তুলবে না বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নেতারা ১৭টি গাড়িযোগে ভারত থেকে মুজিবনগরে এসে শপথগ্রহণ করেন। তারা যে সড়কে মুজিবনগর পৌঁছেন; ওই সড়কের নামকরণ ‘স্বাধীনতা সড়ক’ করার প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে। সড়কটির বাংলাদেশ অংশে দৈর্ঘ্য মাত্র দুই কিলোমিটার হলেও ভারতে নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য অনেক বেশি।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সড়কটি দুই দেশের জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে আমাদের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সংলাপ বিজয়ের মাসে হচ্ছে। তাই এটা অনেকটাই বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার বাইরে এই সংলাপ থেকে বেশি কিছু আশা করছি না। আমরা অবশ্য সুযোগ পেলে সীমান্ত হত্যা, ভারতের ঋণের বাস্তবায়নের ধীরগতি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও অশুল্ক বাণিজ্য বাধা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।’ মন্ত্রী উল্লেখ করেন, এসব বিষয়ে প্রস্তুতি এখনও চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের তরফে বারবার বলার পরও সীমান্তে হত্যা থামছে না। দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সীমান্তরক্ষীদের নির্দেশনা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ আহ্বান জানাতে পারে।
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। যদিও অর্থ ছাড় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি খুব ধীর। নানান শর্তের কারণে এই ধীরগতি। বাংলাদেশের তরফে এসব শর্ত পুনরায় নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে উদাহরণ হিসেবে বলেন, রামপাল প্রকল্পে ইট-পাথরের ৭০-৭৫ শতাংশ ভারত থেকে আনার শর্ত আছে। কিন্তু ভারত তা সরবরাহ করতে পারছে না। এখন ঠিকাদার কাজ না করে বসে আছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এসবের সরবরাহ অনেক সস্তায় দেয়া সম্ভব। এখন শর্ত পর্যালোচনা করে তা বাংলাদেশ থেকে নেয়ার বিষয়টি যুক্ত করলে তা দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ছোট অংশের কাজ ভারত করবে। এই কাজ না হওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ ঝুলে আছে। এ কাজ দ্রুত সম্পাদনে বাংলাদেশ তাগিদ দেবে। অশুল্ক বাণিজ্য বাধার কারণে বাংলাদেশের অনেক পণ্য রফতানি আটকে যাচ্ছে। যদিও ভারতের পণ্য অবাধে আসছে।
ভারতের প্রস্তাব মোতাবেক, আগামী বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি রুটে নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে। ভার্চুয়াল সংলাপের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের চিলাহাটি এবং ভারতের হলদিবাড়ি অংশের মধ্যে নতুন রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন। ঢাকা থেকে হলদিয়া বন্দর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ চালুর বিষয়ও এজেন্ডায় আনছে ভারত। এ ছাড়া অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ভার্চুয়াল সংলাপের সময়ে সই হবে, যা এখন চূড়ান্ত হচ্ছে।