নিউজ ডেস্ক: ‘পদ্মা সেতুতে মাথা ও রক্ত লাগবে’ এমন গুজবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ছেলেধরা’ বিষয়ক নতুন আতঙ্ক। ছেলেধরার গুজবে কান দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হচ্ছে নিরপরাধ মানুষকে। এমন প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন সিরাজ নামের এক প্রতিবন্ধী।
যদিও, সিরাজের ভাই ও এলাকাবাসীর দাবি- ছেলেধরার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিরাজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যায় উসকানি দিয়েছেন নিহত সিরাজের সাবেক স্ত্রী।
এদিকে, সিরাজের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রোববার (২১ জুলাই) বেলা ১১টায় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, সিরাজের ডিভোর্সি স্ত্রীর দেয়া ভুল তথ্য ও ছড়ানো গুজবে ছেলেধরার অপবাদে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন সিরাজ।
জানা গেছে, গত শনিবার (২০ জুলাই) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া আল-আমিন নগর এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহত হন সিরাজ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পূর্বে শামসুন্নাহারের সঙ্গে বাক-প্রতিবন্ধী সিরাজের বিয়ে হয়। তাদের ৬ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। চার ভাই ৩ বোনের মধ্যে সবার বড় সিরাজ। বাক-প্রতিবন্ধী সিরাজ কখনো কারো সঙ্গে বিবাদে জড়াতো না। বাড়ির অন্যান্যদের উপর বোঝা না হয়ে নিজেই রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি।
এক বছর পূর্বে এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রী আ. মান্নান ওরফে সোহেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার। একপর্যায়ে উভয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এসময় সিরাজের স্ত্রী তাদের কন্যা মিনজুকেও সঙ্গে নিয়ে যায়।
এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে স্ত্রী-কন্যার সন্ধান চালান সিরাজ ও তার স্বজনরা। কিন্তু কোনো হদিস পাননি। এমন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ৬ মাস আগে স্ত্রী শামসুন্নাহার ডিভোর্স লেটার পাঠান সিরাজকে। সেই থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সিরাজ। স্ত্রীকে না পেলেও নিজে নিজে কন্যাকে সন্ধান করতে থাকেন। কিছুদিন পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায় কন্যার সন্ধান পান সিরাজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, শনিবার কন্যা মিনজুকে দেখতে গিয়েছিলেন সিরাজ। নিজের কাছে টাকা না থাকায় বাসার পাশের এক দোকানদারের কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার নেন সিরাজ। এ টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য চুড়ি ও লিপস্টিক কিনে তাকে দেখতে যান সিরাজ।
এদিকে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তার সাবেক স্ত্রীর বর্তমান স্বামী আব্দুল মান্নান ওরফে সোহেল তাকে দেখে ফেলে। সে সময় আব্দুল মান্নান ছেলেধরা বলে চিৎকার করলে এলাকাবাসী সিরাজকে গণধোলাই দেয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে এলাকাবাসী ও তার মেঝো ভাই আলম এই হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন। এ সময় সিরাজ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মিছিলও করে এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গত, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকার ঠিকাদার মোহর চানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সিরাজ। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার মুগিয়া বাজার এলাকায়। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।