নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া:
আসন্ন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সড়ক পরিবহন ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন ঘিরে আবারও জনমনে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুঠিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়, যা সর্বোচ্চ আদালতে ১৮মে রায় প্রকাশে মামলাটি বিচারাধীন আছে। তৎকালীন শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যাকাণ্ডে ও অনুষ্ঠিত পুঠিয়া মোটর শ্রমিক সংগঠনের চলমান নির্বাচনী প্রস্তুতিকে ঘিরে নতুন ভাবে আবারও ষড়যন্ত্রের বীজ বুননের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা অত্র এলাকার সচেতন মহলের।
আসন্ন পুঠিয়া উপজেলায় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা মৃত নূরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা। পিতার এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের আশায় এখনো তিনি সোচ্চার রয়েছেন।
নিগার সুলতানা বলেন,‘রাজশাহীর পুঠিয়ায় আলোচিত শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যা মামলায় আসামী এবং হাইকোর্ট বিভাগের ঘোষিত রায়ের পূর্ব নির্ধারিত দিন আগামী ১৮ মে। হঠাৎ করে ওই রায়ের একদিন আগে ১৭ মে মঙ্গলবার নির্বাচন করার পায়তারা করছে স্বার্থন্বেষী একটি মহল ও হত্যা মামলার আসামীরা। আলোচিত হত্যা মামলার রায়কে বিলম্বিত বা অন্য খাতে প্রভাবিত করতে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কথিত নির্বাচনী প্রস্তুতি চালাচ্ছেন।
হত্যা মামলার বাদী লিখিত অভিযোগে জানান, রাজশাহীর পুঠিয়ায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শ্রমিকদের সাধারণ সভা পাল্টে ফেলেছে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব। ছাত্রলীগের এই নেতা ক্ষমতার দাপট ও টাকার মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থের পরিপন্থী একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। শ্রমিক নেতা নূরুল হত্যার পরিস্থিতির মতই অন্য একটি সন্ত্রাসী পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। হত্যা মামলার আসামীদের বাঁচাতে চালাকি করে হাইকোর্টের ঘোষিত রায়ের একদিন পূর্বে শ্রমিক নির্বাচনের দিন ধার্য করেছে। এদিকে শ্রমিক নেতা হত্যা কাণ্ডের এজাহার ভুক্ত আসামীরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় আ লীগ নেতা মাসুদ ও গোলাম ফারুকের ইশারায় নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা কাণ্ডের রায়কে বিলম্বিত করতে চলছে কথিত নির্বাচনের প্রস্তুতি। যা নিয়ে সাধারণ শ্রমিক ও ভোটারদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এ নিয়ে পুঠিয়ার একাধিক মোটর শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘পুঠিয়া উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। যদি অপরাধীরা অপরাধ করে ছাড় পায়, তবে আরেকটি অপরাধ সংগঠিত করার সুযোগ পাবে। আসন্ন শ্রমিকের চলমান নির্বাচনটি সাধারণের কাছে প্রহসণের নির্বাচন হবে। কোন কিছs আড়ালের জন্যই মনে হয় এমনটা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগি শ্রমিক নেতা মৃত নূরুলের মেয়ে জানান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিব আমার বাবার হত্যা মামলার ধারা ৩০২ বাংলাদেশের দণ্ডবিধি চার্জশিট ভুক্ত পলাতক আসামী পটলকে নির্বাচনে অবৈধ ভাবে পাশ করিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে এবং এই কথিত নেতারা দেশের প্রচালিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শনে ষড়যন্ত্র করছেন। আইন মোতাবেক হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত পলাতক আসামী আব্দুর রহমান পটল কোন ভাবেই মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তাকে আইন গত ভাবে বহিষ্কার ও শ্রমিক অফিসের সকল কার্যকলাপ থেকে মামলা নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত তার সদসপদ স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন। কতিপয় স্থানীয় কথিত নেতাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে অস্বীকার করে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা, সে দিন আমি ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলাম না। তবে স্থানীয় একাধিক শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সভাপতির পদে থাকাকালীন ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে পুঠিয়ার নানান বিষয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রকারী, চাঁদা-টেন্ডারবাজি, ছিনতাই ও মামলা-হামলার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন,‘ আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। অপরাধীদের আইনের নিয়ন্ত্রণের আনা পুলিশের কাজ। যখনই কোন অন্যায় ও বিশৃঙ্খলার কথা শুনবো, পুলিশ বাহিনী বসে থাকবে না। আইন প্রয়োগ কারীরা আইনের ভাষা ও রক্ষার কাজ ভাল বুঝেন তারা সেটাই করবেন।
উল্লেখ্য, পুঠিয়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন ২০১৯ সালের ১০ই জুন থেকে নিখোঁজ হন পুঠিয়া মোটর শ্রমিক ও সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম (৫৭)। পরদিন সকালে সদরের একটি ইটভাটা থেকে তার বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা ২০১৯ সালের শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, শ্রমিক নেতা আব্দুর রহমান পটল, রাজশাহী জেলা আ লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। পরে এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে, পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ তা ছিঁড়ে ফেলেন। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেদের মনগড়া একটা এজাহার লিখে নেন। যা পরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে বরখাস্ত হওয়া পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসি ইন্সপেক্টর সাকিল উদ্দিনকে দুদুকের করা মামলায় জেল হাজতে পাঠায় আদালত।