- শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক
- সোনালি অধ্যায়ের সূচনা
- পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই, কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন
- সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও ভারত সামনের দিনগুলোতে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার করেছে। দ্ইু দেশ একে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যে কোন চ্যালেঞ্জ দুই দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করারও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করবে।
শনিবার দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভারত বাংলাদেশ যৌথ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের নতুন চ্যালেঞ্জ চলমান মহামারী কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি দুই দেশ একসঙ্গে মোকাবেলা করবে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় উৎসবও দুই দেশ একসঙ্গে উদ্যাপন করবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় বীরদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে আশুগঞ্জে মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। উভয় প্রধানমন্ত্রী এই স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
সীমান্তে অনাকাক্সিক্ষত ‘ঘটনা’ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে নির্যাতনের মুখে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনে ভারতকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাঠ পর্যায়ে (গ্রাউন্ড লেভেল) সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তন চায়।
শনিবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং সীমান্তে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং সীমান্তে দুঃখজনক ঘটনা কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেন।
এর জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, মাঠ পর্যায়ের (গ্রাউন্ড লেভেল) সহযোগিতা এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সহায়তা করবে।
তিনি জানান, জোরপূর্বক বিতাড়িত এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে ভারতের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গারা যাতে মাদককারবারে ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবর্তন হওয়া উচিত।
করোনা টিকা সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভারতের প্রতিবেশীই প্রথম নীতির প্রতিফলন। করোনা টিকার প্রথম বাণিজ্যিক চালান ইতোমধ্যে ব্যবহার হয়েছে। বাকি চালানগুলো শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে এক দশমিক দুই মিলিয়ন করোনা টিকা সরবরাহ করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দেন শেখ হাসিনা।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। নয় বছর আগে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, অভিন্ন সব নদীর পানি বণ্টন নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রী পানি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জ্বালানি, পরিবেশ, নিউক্লিয়ার জ্বালানি, বাণিজ্য ও সংযোগ উন্নয়নে সহযোগিতা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে অর্জনের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময়ে বলা হয়, ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশে ৮টি প্যাকেজ কর্মসূচী রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি প্যাকেজ কর্মসূচীর অগ্রগতি হয়েছে। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এ সময়ে দুই প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্রে চিহ্নিত করতে একমত হন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুই দেশের সেরা অর্জন নিয়ে যৌথ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এতে বাংলাদেশের সেরা এবং ভারতের সেরা দিকগুলো তুলে ধরা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রী উপলক্ষে ভারত বাংলাদেশের ৫০ উদ্যোক্তাকে আমন্ত্রণ জানাবে, যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ সুযোগ পাবে। এ উপলক্ষে ভারত সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন করবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। শনিবার রাতে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সফর নিয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তিস্তা চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তবে এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় ভারত জানায়নি বলেও জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু তিস্তা নয় ছয়টি যৌথ নদীর ন্যায্য হিস্যার বিষয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, সীমান্তে হত্যার বিষয়টিও আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন। তিনি এ সমস্যার সমাধানে তাকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। এর জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সীমান্তে হাট তৈরি করা গেলে এ সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতে, সীমান্তে অবাধ বাণিজ্য হলে এবং সে জন্য প্রচুর সীমান্ত হাট চালু করতে পারলে সীমান্তে হত্যার মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির কাছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর সমাধানের কথা বলেছেন। তখন নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন যে, সীমান্তে হাট তৈরি করা গেলে এ সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে। হাটের মাধ্যমে সীমান্তে ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকা- চলমান থাকলে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ভারতের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত মনে করছে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া উচিত। সেটিই নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
ড. মোমেন বলেন, দু’দেশের মধ্যে যেসব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে তার সবই দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। সে সঙ্গে এ অঞ্চলের উন্নয়নে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করতেও আঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ সফর আমাদের জন্য গর্বের ও গৌরবের। সব মিলিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শুধু ভারত নয় বিগত দশ দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। সে সঙ্গে ষাটেরও অধিক দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তারা আমাদের অভাবনীয় সাফল্যে অভিভূত বলেও জানিয়েছেন। সে সঙ্গে আমাদের সঙ্গে কাজ করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত দশ দিনের আয়োজন আমাদের বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। ’
ড. মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফর পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিজ অব রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং আশুগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের স্মৃতি ফলকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সে সঙ্গে ঢাকা ও নতুন জলপাইগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রবীন্দ্র ভবনের সম্প্রসারিত উন্নয়ন কাজ, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন তিনটি সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আসার জন্য। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ভারত মৈত্রী কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশকে করোনা ভ্যাকসিন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সফরের সময় সঙ্গে করে ১.২ মিলিয়ন করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন। এজন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, যে কোন দেশের আগে বাংলাদেশ প্রথম ভারতের ভ্যাকসিন পেয়েছে। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের করোনা মোকাবেলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবেন। ভারতের নীতি হচ্ছে, প্রতিবেশী আগে। বাংলাদেশকে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের মধ্যদিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও সেটাই প্রমাণ করেছেন।
তিনি জানান, দুর্যোগ দমনে সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূরের পদক্ষেপ, দুই দেশের জাতীয় ক্যাডেট কোরের মধ্যে সহযোগিতা বিনিময়, তথ্য যোগাযোগ ও রাজশাহীতে খেলার মাঠ বিষয়ে দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়। এছাড়াও শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসমাধি, ভারতের উপহার ১০৯টি এ্যাম্বুলেন্স, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল, দুটি সীমান্ত হাট উদ্বোধন এবং স্মারক ডাকটিকেটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসলে টাইগার গেটে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তারা একান্ত বৈঠকে বসেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়।
বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার পর দুই নেতার উপস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে এই ৫টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এছাড়া কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ১০৯টি এ্যাম্বুলেন্স ও ১২ লাখ করোনা টিকা উপহার দেয়া হয়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের সামনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ্যাম্বুলেন্সের চাবি ও টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।
সমঝোতা স্মারকগুলো হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রেজিলেন্স এবং প্রশমন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়া (আইএনসিসি) মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক, বাণিজ্য নিয়ে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস এ্যান্ড এ্যামপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ট্রেনিং (বিজিএসটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য, কোর্সওয়ার এ্যান্ড রেফারেন্স বুক সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক এবং রাজশাহী কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় স্পোর্টস সুবিধা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকায় আসেন তিনি। সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে মোদির নেতৃত্বে আসা ভারতের প্রতিনিধি দলকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা মোদিকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। মোদিকে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
ঢাকা-জলপাইগুড়ি ট্রেন উদ্বোধন ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন কর হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটি যৌথভাবে উদ্বোধন করে বাংলাদেশে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন এ আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলো। তবে শনিবার উদ্বোধন হলেও করোনা পরিস্থিতি খারাপ থাকায় আপাতত যাত্রা করছে না ট্রেনটি। দু’দেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে ও ভারতীয় পর্যটন ভিসা চালু হলে ট্রেনটি শিডিউল অনুযায়ী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউজলপাইগুড়ি রুটে চলাচল করবে।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চিলাহাটি হয়ে ভারতের নিউজলপাইগুড়ি যাবে ট্রেনটি। ঢাকা থেকে চিলাহাটির দূরত্ব ৪৫৩ কিলোমিটার ও চিলাহাটি থেকে নিউজলপাইগুড়ির দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার। আপাতত ভারতীয় রেক দ্বারা সপ্তাহে দু’দিন চলাচল করবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউজলপাইগুড়ি সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং নিউজলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রবিবার ও বুধবার চলাচল করবে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটির ভাড়া হচ্ছে এসি কেবিন (বার্থ) ৪ হাজার ৯০৫ টাকা। এসি সিট ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। এ ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্স।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুইদিনের সফর শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাত সাড়ে ৯টায় আবার দিল্লী ফিরে যান।