নিউজ ডেস্ক:
চীন তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ করোনা টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে প্রদান করবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত সব চীনা নাগরিককে টিকা দিতে সিনোফার্মকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাশিয়ার ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ভি’ সংগ্রহে ‘প্রাথমিক অগ্রগতি’ অর্জন করেছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, সিনোফার্ম আমাদের টিকা সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, তারা উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকা কেনার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) যৌথ গবেষণা ও উৎপাদনের কারখানাও স্থাপন করতে চেয়েছে আনুই জিফেই লংকম বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। তাদের টিকা পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে যে টিকা উৎপাদিত হবে, তার একাংশ মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রদান করবে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) টিকা পরীক্ষার প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আনুই জিফেইকে চিঠি দিয়েছে। বিএসএমএমইউ’র ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চূড়ান্ত কিছ্ ুএখনো হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুই জিফেই’র সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে চিঠি দেয়াসহ অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও বিষয়টিতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন তিনি। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে আনুই জিফেই নিজেদের টাকায় বিএসএমএমইউ’র সঙ্গে করোনার টিকা পরীক্ষার প্রস্তাব দেয়। পরীক্ষা সফল হলে তারা বাংলাদেশে টিকার গবেষণার পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের কারখানা স্থাপনেরও কথা বলে ওই প্রস্তাবে। এর আগে চীনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অর্থায়ন-জটিলতায় সেই উদ্যোগ এগোয়নি।
ভারত সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) উৎপাদিত অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন রফতানি নিষিদ্ধ করার পর চলমান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এমন সময় অন্য দেশ থেকে টিকা কেনার অগ্রগতির খবর পাওয়া গেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিলেও এখান পর্যন্ত সিনোফার্ম জাতিসংঘের এই সংস্থাটি থেকে তাদের ভ্যাকসিনের অনুমোদন পায়নি।
প্রফেসর ডা. খুরশিদ বলেন, সরকার এখন চীনা ভ্যাকসিন সম্পর্কিত বিধিবিধান নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আগে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিয়েছি। সিনোফার্মের টিকার ক্ষেত্রেও আমরা সেটাই বিবেচনা করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি তদারকি করছেন।
সরকারের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে ‘চীন সরকারকে টিকার জন্য অনুরোধ জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে’ বলেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ট্রাকারের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৩০ ডিসেম্বর সিনোফার্ম ঘোষণা দিয়েছিল যে এ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যার ফলশ্রুতিতে চীন সরকার এটিকে অনুমোদন দেয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি এখনো তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেনি।
অপরদিকে বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত জানুয়ারিতে সিনোফার্মার ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয় এবং জানায় যে এর কার্যকারিতা ৮৬ শতাংশ। ইতোমধ্যে চীনে তৈরি এই ভ্যাকসিনটি বাহরাইন, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
এছাড়া এটি জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়া, মিশর, গায়ানা, হাঙ্গেরি, ইরান, ইরাক, জর্ডান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, পেরু, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়েতে এবং সীমিত আকারে ব্যবহারের জন্য সার্বিয়া ও সেশেলিসে অনুমোদন পেয়েছে।
ইতোমধ্যে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য গামালেয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ স্পুটনিক-ভি নামের ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। যেটি গ্যাম-কোভিড-ভ্যাক নামেও পরিচিত। নিউ ইয়র্ক টাইমসের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ট্রাকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ছয় শতাংশ। এটি ৬০টি দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনেছে। যার মধ্যে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও, সরকার উপহার হিসেবে ভারতের কাছ থেকে ৩২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।