নিজস্ব প্রতিবেদক:
১ জানুয়ারি থেকে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এই অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন। জানাতে পারবেন সমস্যা ও অভিযোগ।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
লাইভের শুরুতে মেয়র আতিকুল ইসলাম নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নগরবাসীর কথা শুনব। নগরবাসীর মতামত নিয়ে উন্নয়ন করব, ঢাকা সাজাব। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেই লাইভে এসেছি।
ফেসবুক লাইভকে কেন্দ্র করে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে নগরবাসীর বিস্তর প্রশ্ন, মতামত ও অভিযোগ জমা হয়। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, বর্জ্যের সমস্যা কঠিন ও বাস্তবমুখী সমস্যা। সবাই ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ চাই। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক নানা উদ্যোগে এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগও নিয়েছিলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, আধুনিকায়ন হয়েছে। রাজউক ও অন্যান্য সংস্থা বড় বড় ভবন তৈরি করেছে। তবে বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে, সেই জায়গা রাখা হয়নি।’
শহর পরিচ্ছন্ন রাখা সবার দায়িত্ব জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘মিরপুরে গোদাখালী খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রচুর ডাবের খোসা ও নানা ধরনের পুরোনো আসবাব পাওয়া গেছে। ময়লাগুলো আমাদের (নগরবাসীর) ফেলা। সবাই সচেতন হলে, যত্রতত্র বর্জ্য না ফেললে ঢাকা সুন্দর হবে।’
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ডিএনসিসি আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, রোড সুইপার দিয়ে সড়ক ঝাড়ু দেওয়া এবং ড্রেন সাকার দিয়ে নালা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। যে কাজ হাত দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা করতে পারেন না, সেটা যন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার কাজ চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ একনেকে পাশ হয়েছে। আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্ট হচ্ছে।
মশা নিয়েও নগরবাসীর অভিযোগ ছিল বিস্তর। ফেসবুক লাইভের মন্তব্যে অনেকে নিজ নিজ এলাকায় মশার উপদ্রবের সমাধান জানতে চান। অনেকে মশামুক্ত ঢাকা বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, সেটাও মেয়রের কাছে জানতে চান। মেয়র বলেন, মশা আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে মশামুক্ত ঢাকা বাস্তবায়নের চাইতে মশা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর মশার ওষুধ আমদানিতে ২২ বছরের সিন্ডিকেট ভেঙেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, মশার ওষুধ আমদানিতে একটি সিন্ডিকেট জড়িত ছিল। সেই শক্ত সিন্ডিকেট ভাঙা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এখন মশার ওষুধ আনা হচ্ছে।
সম্প্রতি চতুর্থ প্রজন্মের মশার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে নোভালিউরন নামের একটি বিদেশি ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মশার লার্ভা থেকে আর পরিপক্ব মশা হতে পারবে না।
ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিয়ে মেয়র বলেন, এডিস মশা পোলট্রি মুরগির মতো। এরা স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন পানি ছাড়া বংশ বিস্তার করতে পারে না। এডিসের বিস্তার রোধে নগরবাসী সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘরে, বাইরে ও বাড়ির আশপাশে কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে সেই পানি ফেলে দিতে হবে।
তবে কিউলেক্স মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে ওয়াসার খাল ও রাজউকের লেক সিটি করপোরেশনের নিজেদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে বলেও মেয়র জানান।
এ ছাড়া মেয়রের লাইভে জলাবদ্ধতা সমস্যা, ভাঙা রাস্তাঘাট মেরামত, সড়কবাতি স্থাপন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন কর প্রদান, খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য মাঠ–পার্ক নির্মাণ প্রভৃতি বিষয়ে নগরবাসীর করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেয়র আতিক।
আমি নগরপিতা হতে চাই না, আমি একজন নগরসেবক। তবে আমি চাই, আমরা যেন সবাই নিজেকে ঢাকার মেয়র ভাবি। তাহলে ঢাকা শহর আমাদের প্রাণের ঢাকায় পরিণত হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম
ফেসবুক লাইভে আসা প্রশ্ন ও সমস্যাগুলো ডিএনসিসির সব বিভাগের প্রধানদের কাছে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশ্ন ও সমস্যাগুলো বিভাগীয় প্রধানদের দেওয়া হবে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘আমার কী হবে?’ এটা না ভেবে ‘আমাদের কী হবে?’—এমন ভাবার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র তাঁর ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান শেষ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়া ফেসবুক লাইভটি রাত সাড়ে আটটায় শেষ হয়। এখন থেকে প্রতি মাসে এই লাইভ অনুষ্ঠান হবে। ভবিষ্যতে সামগ্রিক সমস্যার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সমস্যাও শোনা হবে বলে জানানো হয়।