নিউজ ডেস্ক:
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার (৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) সহায়তা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি কাটিয়ে উঠতে বাজেট সহায়তা হিসেবে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে। সম্প্রতি এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়াকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
চিঠিতে এ অর্থ সামাজিক সুরক্ষা এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তায় ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজন মেটানো হবে স্বাস্থ্য খাতের। চিঠিতে সামাজিক উন্নয়নে ধারাবাহিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেটের চাহিদা মেটাতে বাড়তি অর্থ প্রয়োজন। এ জন্য বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এডিবি এখনো আমাদের কিছু জানায়নি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় কম হবে। সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার প্রভাব বাজেটে খুব বেশি পড়বে না। কিন্তু করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনানুষ্ঠানিক খাতের বিশাল জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও নগদ সহায়তার জন্য বাজেট থেকে অর্থ দিতে হবে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ কম নয়। আমার হিসাবে, মোট দেশজ উৎপাদনের একটি অংশ দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পেছনে খরচ করতে হবে। তাই সরকারের উচিত শুধু এডিবি নয়, অন্য উৎসগুলো থেকে অর্থের সংস্থান করা।
অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, দুই ভাগে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে করোনায় সামাজিক প্রত্যাবাসনে। বাকি অর্থ ব্যয় করা হবে বাংলাদেশ উন্নয়নে সংস্কারমূলক কাজে।
এর আগে গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক করোনার টিকা কেনাসহ করোনা মোকাবিলায় ৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বা ১০৫ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে সরকারের সঙ্গে। করোনার প্রভাব মারাত্মকভাবে সামাজিক ও অর্থনীতিতে পড়েছে। সম্প্রতি যোগ হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় এডিবির প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ দমমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয় ৫ দশমিক ২ শতাংশে। তিনি বলেছেন, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদা কমেছে। এতে বাংলাদেশের রফতানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এই মহামারি দেশের শিল্প ও সেবা খাতের সরবরাহ এবং উৎপাদন পরিস্থিতিতে আঘাত করেছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এতে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। অনেকে কর্মচ্যুত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত দশকের তুলনায় এবার দারিদ্র্য বিমোচনা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১৪ হাজার ৬শ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে নজর দেওয়াসহ সার্বিক ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
এরই মধ্যে মার্চ থেকে নতুনভাবে করোনার প্রভাব বেড়েছে। এতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এডিবির এই সহায়তা পাওয়া গেলে আসন্ন বাজেট সহায়তা হিসাবে ব্যবহার করা হবে। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এর মধ্যে দেশের ১৫০টি উপজেলায় বসবাসকারী সব বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া কিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের সংস্কার করা হবে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখভাগের কর্মীদের (চিকিৎসা কর্মী, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী, কোভিড-১৯ এর কারণে চাকরি হারানো দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে।