ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হয়ে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। মূলত আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই করিডর। ভারতীয় ঋণচুক্তির (লাইন অব ক্রেডিট) আওতায় এই প্রকল্পে অর্থায়ন হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় ভারতীয় ঋণচুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল-ধরখার হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ককে চার লেনের জাতীয় মহাসড়ককে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে (জিওবি) ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের অর্থায়ন ২ হাজার ২৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২০ জুলাই একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের নকশা ও আশুগঞ্জ নদীবন্দর টার্মিনালের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত ১০৭ দশমিক ৫০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার করোনার কারণে কাজের গতি পিছিয়ে গেছে। পরামর্শক ও ঠিকাদাররাও সময়মতো কাজ করতে পারেননি। তবে এর মধ্যেই প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দুটির কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা ও টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাইলের লোড টেস্ট কাজ চলছে। শিগগিরই মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। যদিও কাজের গতি খুবই ধীর। বাকি একটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যার মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা পুরোপুরি কেটে গেলে প্রকল্পের কাজের গতি আরও বেড়ে যাবে। তবে প্রকল্প ও আশুগঞ্জ নদীবন্দর টার্মিনালের নকশা চূড়ান্ত হয়ে হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। থাকবে ১৬টি সেতু, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস, তিনটি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট এবং ১০টি ফুটওভারব্রিজ। তিনটি প্যাকেজের আওতায় নির্মাণ করা হবে এই মহাসড়ক। প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ১২ দশমিক ২১১ কিলোমিটার, দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ২৭ দশমিক ০৫৪ কিলোমিটার এবং তৃতীয় প্যাকেজের আওতায় ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। থাকবে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়ার ধরখার দিয়ে সড়কটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। ভারতীয় ঋণচুক্তির আওতায় এই মহাসড়কের বাস্তবায়ন কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহরুল আমিন বলেন, ‘ভূমি ও করোনাসহ নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কাজ শুরু করা যায়নি। অনেকটাই আমরা পিছিয়ে গেছি। আশা করছি শিগগিরই দৃশ্যমান কাজ শুরু করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো জমি বুঝে পাইনি। ২৬৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল।’ শাহরুল আমিন বলেন, কভিডের কারণে পরামর্শক এবং ঠিকাদাররাও আটকা পড়েছেন। তবে এখন এসব জটিলতা কাটিয়ে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারকে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।