শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / চার মাসে ২ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার এলসি

চার মাসে ২ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার এলসি

নিউজ ডেস্ক:
পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছেই। প্রতি মাসে রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন (৭৪২ কোটি ১৬ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৩২ কোটি) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই চার মাসে দেশে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই চার মাসে প্রতি মাসে গড়ে ৬ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে দেশে।

আর এলসি খোলার এই হিড়িকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভেও টান পড়েছে, নেমে এসেছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

সে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গিয়েছিল, বেড়েছিল এলসি খোলার পরিমাণ।

এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে বলে জানান তারা।

তবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের ধাক্কায় ফের বেসামাল বিশ্ব অর্থনীতি; আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। জ্বালানি তেলের দাম বেশ কমে গেছে। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার এলসি খোলার সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে; সেটা ৯৭০ কোটি ২৭ লাখ (৯.৭০ বিলিয়ন) ডলার, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৪৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

চার মাসের পণ্য আমদানির এলসি খোলার এই তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ ভালোই চলছিল; করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছিল। রাজস্ব আদায়ে গতি এসেছিল। রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সূচকই ইতিবাচক ধারায় চলে এসেছিল। পণ্য আমদানি যেটা বাড়ছিল, তার প্রভাব বিনিয়োগে পড়তে শুরু করেছিল। অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছিল।

‘কিন্তু এখন অবস্থা বেশ খারাপ মনে হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি বড় ধাক্কা আসছে মনে হচ্ছে। আর সেটা নিয়ে আসছে ওমিক্রন। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। ওমিক্রনের ধাক্কা কতটা মারাত্মক হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

বিশ্ব পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেশের ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন আহসান মনসুর।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা খুবই চিন্তিত। প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটছে আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘মাত্রই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছিলাম। রপ্তানি বেশ ভালোই বাড়ছিল; প্রচুর অর্ডার আসছিল। কিন্তু ওমিক্রনের ধাক্কা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, কে জানে!’
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।

রিজার্ভে টান
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি রিজার্ভও কমছে, নেমে এসেছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার হিসেবে বর্তমানের এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।

গত ৪ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা ছিল গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এরপর আর তা ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচেই অবস্থান করছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। একের পর এক রেকর্ড হয়। করোনাকালে আমদানিতে ধীরগতি আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সূচক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আরও দেখুন

বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …