নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ত নাটোরের চকবৈদ্যনাথ। এখানে দুই শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে। গত তিন বছরে লোকসান দিতে দিতে অনেকটা পুঁজি হারা হয়ে গিয়েছিল এখানকার ব্যবসায়ীরা। করোনার মহামারীর পরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে এখানকার আড়ত এবং মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। এবছরের শুরুতেই ১৬ লাখ পিসের বেশি চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এই বৃহত্তম আড়তের ব্যবসায়ীরা। দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চল মিলিয়ে ৪০টি জেলার চামড়া আসে এখানে। শুধুমাত্র ঈদের দিন এবং তার পরের দিন লক্ষাধিক চামড়া সংগ্রহ করেছে এখানকার আড়ৎ মালিকরা। চামড়ার উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার ব্যাপারেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।
এখানকার আড়ত মালিক হাসিবুল ইসলাম জানান, লবণের দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো মানের চামড়া সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। লবণের মূল্য দ্বিগুনেরও বেশি হওয়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ায় লবণ কম লাগাচ্ছে। এতে চামড়ার গুণগত মান কিছুটা নষ্ট হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, কোন কোন ক্ষেত্রে চামড়ার দাম না পাওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ আসে। এই অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া দামের চেয়েও কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেই। তবে মানহীন চামড়া আমরা কিনতে চাই না।
জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, লবণ তো আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এটি তো রাশিয়া ইউক্রেন থেকে আসে না। তাহলে হঠাৎ করে ৭০০ থেকে লবণের বস্তা কিভাবে ১৩০০ টাকা হয়ে গেল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোন পদক্ষেপ নিল না। বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলেও আমাদের প্রণোদনা দিতে পারতো সরকার। ট্যানারি মালিকরা তো এর দায় নিবে না।
নওগাঁ জেলার আত্রাই থেকে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ী বাসেত আলী জানান, নাটোরের আড়ত মালিকরা টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তারা ঐ সকল এলাকা থেকে কম দামে চামড়া সংগ্রহ করছে।
কিছু চামড়া নষ্ট হওয়া এবং না কেনার ব্যাপারে চক বৈদ্যনাথ চামড়া আরত এবং ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান বৃষ্টি এবং সঠিক সময়ে সব লবণ না লাগানোর কারণে ৫ থেকে ১০% চামড়া নষ্ট হতে পারে।
তিনি আরো জানান, আমরা মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং ফরিয়াদের সচেতন করেছি। যাতে সঠিক সময়ে তারা চামড়ায় লবণ লাগায় এবং আড়তে নিয়ে আসে।
তিনি জানান, কেউ কেউ অর্থাভাবে চামড়া না কিনতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে চামড়া না কেনার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি জানান এখানকার আড়ত মালিকদের প্রায় ৭০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে এই টাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করলে চামড়া কিনতে কোনই অসুবিধা হবে না। সরকার ঋণ দিচ্ছে ট্যানারি মালিকদের সেটি না দিয়ে আড়তদার এবং ব্যবসায়ীদের এই টাকা স্বল্প সুদে ঋণ দিলে কোন চামড়া কিনতেই অসুবিধা হতো না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে আমরা কোন সিন্ডিকেট করিনা। সরকার ব্লু ওয়েট চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে মৌসুমী ব্যবসায়ী, ফরিয়া এবং আড়তদার মালিক সবাই লাভবান হতো। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ এর পরেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া বাজার নাটোরের চক বৈদ্যনাথ থেকে ৫০০ কোটি টাকার উপরে চামড়া কেনা বেচার আশা করছে এখানকার ব্যবসায়ীরা।