প্রতিবেদক:
সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন চললেও এই জেলায় তেমন লকডাউন চোখে পড়েনি। গত জুলাই মাসে করোনা সংক্রমণ কম থাকলেও চললি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারো সংক্রমণ উর্ধ্বমুখি । স্বাস্থ্যবিধি মানা মডেল জেলায় পাল্লাদিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, ঢিলাঢালা লকডাউন ও ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে এই জেলায় লোক আসায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। সবাইকে টিকায় আওতায় নিয়ে আসতে পারলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুন মাসে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের হার ৫৫% হওয়ায় জেলাটিকে করোনার হটস্পট জেলা ঘোষণা করা হয়। এই উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় মোট ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন এবং তৃতীয় দফায় বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করেন স্থানীয় প্রশাসন। এতে পরে জুলাই মাসে ১০ থেকে ১২ শতাংশে নেমে আসে করোনা সংক্রমণের হার।
জুলাই মাসের ১ থেকে ৭ তারিখ করোনা সংক্রমণের হার ১৫%,৮ থেকে ১৪ তারিখ করোনা সংক্রমণের হার ৯.৮৭%, ১৫ থেকে ২১ তারিখ করোনা সংক্রমণের হার ১৩.৮৮% এবং ২২ থেকে ২৮ তারিখ করোনা সংক্রমণের হার ১২.৪২% । কিন্তু চলতি মাস (আগস্ট) শুরু হতে না হতে আবারো একলাফে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করোনা সংক্রমণের হার বাড়েছে। সেই সাথে পাল্লাদিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এই সংক্রমণের হারে আবারো ভাবিয়ে তুলেছে করোনার হটস্পট জেলার সাধারণ মানুষগুলোকে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, জেলায় প্রথম দিকে লকডাউনে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেলেও এখন তা নাই বললেই চলে। শহরেগুলোতে কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও গ্রামে তার ছিটাফোটাও নেই। চায়ের দোকানের আড্ডা দিয়ে চা পান করা থেকে সব কাজ হয় মাস্ক ও সামাজিক দূরুত্ব ছাড়াই। অনেকেই আবার করোনার টিকা দেওয়ায় মনে করেছে করোনা আর হবে না। তাতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুও বাড়ছে। সাধারণ মানুষের দাবি আবারো স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করলেই করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার স্বাচিপ’র নেতা ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, জেলায় করোনা সংক্রমণ আবারো দিন দিন বাড়ছে। করোনা সংক্রমন প্রতিরোধ সংক্ষিপ্ত প্রোগ্রাম করলে হবে না। দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম হাতে নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। আর প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোতে মসজিদের ইমান, মাস্টার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ দিয়ে ইউনিট গঠন করতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, করোনায় লকডাউন চললেও জেলায় চলছে ঢিলাঢালা লকডাউন। ঢিলাঢালা লকডাউন ও ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে এই জেলায় লোক আসায় করোনা সংক্রমন ও মৃত্যু বাড়ছে। আর শহরগুলোতে সাধারণ মানুষ কিছুটা সচেতন হলেও গ্রামাঞ্চলে মানুষ সে রকম সচেতন নয়।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুমিনুল হক জানান, ঈদুল আযহাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসে লকডাউন না মানার কারণে এই করোনা সংক্রমণটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আতংকিত না হয়ে মাস্ক ও সামাজিক দুরুত্ব বজাই রেখে সচেতনভাবে চলাচল করতে হবে সবাইকে। আর জেলার সবাইকে টিকায় আওতায় নিয়ে আসতে পারলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে সব ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
করোনা সংক্রমন বাড়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি। এ জেলায় এখন পযন্ত করোনা আক্রান্ত ৫১৬৯ জন। করোনা মারা যায় ১৪৩ জন।