নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন করায় এক শিক্ষার্থীর গানের ডায়েরি কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম এমপির সফরসঙ্গী ও বিএনপি নেতা লতিফুর রহমান ওরফে বিলাস সর্দারের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) উপজেলার মুশরিভুজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবীন-বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, মঞ্চে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ধরমপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে লতিফুর রহমান বিলাস সর্দার, আজিজুর রহমান সাহজাহানের ছেলে সাহবাজ ও বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের মুলতান আলী আইভির ছেলে আসলাম বেগকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
ইসরাতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভুজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবীন-বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন শুরু করে। এ সময় ওই ছাত্রী ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানটি গাইতে পরিবেশ করে। একপর্যায়ে এমপির সফরসঙ্গী বিলাস সরদার মঞ্চে উঠে তার গানের ডায়েরিটি কেড়ে স্টেজের বাইরে ছুড়ে ফেলে এবং তার মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেয়। এ সময় মেয়েটি হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে আবার ইসরাত জাহানকে ওই গানটি পরিবেশন করান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নবীন বরণ অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ সদস্য বিএনপি’র নেতা আমিনুল ইসলাম প্রধান অতিথি ছিলেন। প্রথম পর্ব শেষ করে দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক চলার সময় এমপি আমিনুল ইসলাম স্কুলের অন্যান্যে একটি ঘরে পরিদর্শন করছিলেন। এসময় তার অনুসারীরাও তার সঙ্গে অবস্থান করছিল। ইসরাত জাহান গানটি শুরু করা মাত্র বিলাস সর্দার দ্বিতীয় তলা থেকে মঞ্চে এসে গান গাইতে বাধা দেয়, প্লেস্ট্যান্ডে থাকা ডায়েরি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেয়।
দলদলি ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই ঘটনা ন্যক্কারজনক। আমরা এর নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘বিলাস ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, ফেসবুক খুঁজে দেখুন তাহলে প্রমাণ পাবেন। তার বাবা বিএনপি করে। আমি বিলাসকে চিনিও না। আমি ঘটনার বিষয়টি জানি না, আমি খাওয়া-দাওয়ার পর সেখান থেকে চলে আসি। পরে রাত ১০টার দিকে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো একেবারে মিথ্যা। আমিও চাই আপনারা সত্যটা বের করুন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাঈদ জামান আনন্দ জানান, বিলাস সর্দার ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো কোনদিন জড়িত ছিল না। এমপি আমিনুল যে কথা বলেছেন সেটা মিথ্যা। নিজেকে বাচানোর জন্য বলে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আসগার আলীর বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। এই ঘটনাটি যে ঘটিয়েছে তার কঠোর শাস্তি চাই প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে। আর যেন কোন প্রতিষ্ঠান এরকমের ঘটনা না ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্প্রতিবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফুল হক চুনু জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর উৎসব-আনন্দের প্রস্তুতিকে নস্যাৎ করাতেই এ ঘটনা ঘটনো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র এমপি আমিনুল ইসলামকে অবাঞ্চিতও ঘোষনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
ভোলাহাট থানার ওসি নাসিরুদ্দিন মন্ডল জানান, ‘এ ঘটনায় ভোলাহাট থানায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা লাল মোহাম্মদ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে এবং ভোলাহাট থানা পুলিশের এসআই রাজু আহম্মেদ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিলাস সরদারসহ তিন জনকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’ তার বাড়িতে থেকে একটি বিদেশী পিস্তুল উদ্ধার করা হয়। আর তার বিরুদ্ধে আরো একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন পুলিশ।