উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষকে পেনশনের আওতায় আনতে নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর এ উদ্যোগ ‘যুগোপযোগী’ উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, ‘নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগেই বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন নীতিমালার খসড়া রূপরেখা তৈরির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। চলতি মাসেই কমিটি এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা অর্থ সচিবের কাছে জমা দেবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম জানান, পেনশন কাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় বিষয়ের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি এ বিষয়ে অন্যান্য অভিজ্ঞতা একত্রিত করে নীতিমালা তৈরিতে এ সংক্রান্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। চলতি মাসেই নীতিমালার খসড়া তৈরি করে অর্থ সচিবের কাছে জমা দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়াটি প্রস্তুত হলেই সরকার বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে নীতিমালা চূড়ান্ত করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত হলে প্রথমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এর আওতায় আনা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষকে এ পেনশনের আওতায় আনা হবে। এতে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর। জানা গেছে, দেশের ছয় কোটি কর্মজীবীর পাঁচ কোটি ৮০ লাখই কাজ করেন বেসরকারি খাতে। চাকরি জীবন শেষে তাদের অর্থসংকটে পড়তে হয়। এসব কর্মজীবীকে শেষ বয়সে সুবিধা দিতে চলতি বাজেটে দেয়া হয়েছে সবার জন্য পেনশন বা সর্বজনীন পেনশনের প্রতিশ্রুতি। সে আলোকে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, সবার জন্য পেনশন কাঠামোটি প্রস্তুত করা বেশ সময় ও ব্যয়-সাপেক্ষ বিষয়। অনেক চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। এখন শুধু সরকারি চাকরিজীবীরাই মাসিক পেনশন সুবিধা পান। নতুন ব্যবস্থায় এর বাইরে বেসরকারি খাতে নিয়োজিত চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র জানায়, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি ২০০৪ সালে সীমিত আকারে চালু করেছিল ভারত সরকার। কলকাতা ও আসাম ছাড়া বাকি সব রাজ্যে এ ব্যবস্থা বর্তমানে চালু রয়েছে। নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।
এর আগেও এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ওপর একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পেনশন তহবিল হবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অর্থাৎ চাকরিজীবী ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ তহবিলে অর্থ দেবে। এর পরিমাণ হতে পারে চাকরিজীবীর মূল বেতনের শতকরা ১০ ভাগ। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও সমপরিমাণ অর্থ দেবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে একই নিয়মে তহবিল গঠন করা হবে।