চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়েছে প্রায় ২০০ মিটার লম্বা একটি জাহাজ। মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজটির নাম ‘এমভি কমন এটলাস’। আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-১ জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এই প্রথম এত লম্বা জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো হলো। এর অর্থ এখন আগের চেয়ে বেশি পণ্য বোঝাই করে জাহাজগুলোতে বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো যাবে। এতে জেটির সংখ্যা যেমন কম লাগবে, তেমনি পণ্য পরিবহনেও খরচ কমবে। এ ছাড়া বন্দর থেকে সরাসরি বিভিন্ন দেশে কনটেইনারবাহী জাহাজসেবা চালুর সুযোগও বাড়বে।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে সুযোগ–সুবিধা বাড়াতে জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ডকে দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। ওই সমীক্ষায় বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে বড় জাহাজ ভেড়ানো যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরই জেটিতে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) জাহাজ ভেড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হলো।
বন্দরে ভেড়ানো ২০০ মিটার লম্বা জাহাজটি ব্রাজিল থেকে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে এসেছে। এই চিনি আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। বন্দরের পৌঁছানোর সময় জাহাজটির ড্রাফট ছিল ১০ দশমিক ৮০ মিটার। তাই প্রথমে জাহাজটি বহির্নোঙরে রেখে কিছু চিনি খালাস করা হয়। পরে ড্রাফট কমলে বন্দর জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানো হয়। এ সময় সেটিতে ৩৬ হাজার টন চিনি ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৮৬ মিটার লম্বা এবং ৯ দশমিক ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো যেত। এরপর আরও বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা চালু করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো যেত।
চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটানির্ভর একটি প্রাকৃতিক বন্দর। বন্দরের জাহাজ চলাচলের পথে পানির গভীরতা কম। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বাড়লে জাহাজগুলো বন্দরের নিজস্ব পাইলটের মাধ্যমে সাগর থেকে কর্ণফুলী নদী দিয়ে মূল জেটিতে আনা-নেওয়া করা হয়। অন্যদিকে গুপ্ত বাঁকে প্রশস্ততার সীমাবদ্ধতার কারণে জাহাজের দৈর্ঘ্য বাড়াতে বড় বাধা ছিল। কারণ, গুপ্ত বাঁক দিয়ে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে জাহাজ জেটিতে আনা–নেওয়া করতে হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার এই জাহাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে বন্দরে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ উন্মোচন করা হবে।