নিজস্ব প্রতিবেদক:
সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং জল এবং স্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার অভিযান অব্যাহত থাকার কারণে দেশের আমদানি ও রফতানির বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নৌদস্যুতা এখন শূন্যের কোঠায়। গত তিনবছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরভিত্তিক সমুদ্র বাণিজ্য এখন নিরাপদে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিশে^ স্থান পেয়েছে।
সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজে ডাকাতি দস্যুতাসহ সকল বেআইনী তৎপরতা রোধে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপের পক্ষে চলতি বছরের ৬ মাসের প্রস্তুতকৃত রেকর্ডে এ তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী জাহাজ মালিকরা পণ্য নিয়ে জাহাজ প্রেরণে উৎসাহিত হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড সূত্রেও দাবি করা হয়েছে বহির্নোঙ্গর থেকে বন্দরের জেটিমুখী সব ধরনের জাহাজ ও নৌযান গত প্রায় তিনবছর ধরে নৌদস্যুতামুক্ত আছে। অস্ত্রধারী নৌদস্যুদের হামলে পড়ার অপতৎপরতা নেই। এক সময়ের পাইরেসি বন্দর হিসেবে চিহ্নিত হওয়া চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে নৌদস্যুমুক্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার জাহাজ চলাচল করে থাকে। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশেরই বেশি আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য সমুদ্রপথে এ বন্দরভিত্তিক হয়ে আছে। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আমদানি বাণিজ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থের যে রাজস্ব কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আহরণ করে থাকে তা এ বন্দরকেন্দ্রিক। ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশী অংশে এবং বিশাল বহির্নোঙ্গর এলাকার কোন না কোন স্পটে বাণিজ্যিক জাহাজে নৌদস্যুতার ঘটনা ঘটে আসছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দস্যুতার ঘটনাবলীতে জাহাজ মালিকরা পণ্য নিয়ে তাদের জাহাজ প্রেরণে অনাগ্রহের অবস্থানে চলে যায়। ফলে এ বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে থাকে। এমনিতর পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী জলসীমা বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরভিত্তিক আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের রুটকে নৌদস্যুতামুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সমন্বিত তৎপরতা শুরু হয়। বহির্নোঙ্গর পর্যন্ত জলসীমায় কোস্টগার্ডের টহল তৎপরতায় প্রয়োজনীয় নৌযান স্বল্পতা থাকলেও নজরদারির কঠোরভাবে আরোপিত হওয়ায় নৌদস্যুরা তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এর সঙ্গে নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও সমভাবে কার্যকর থাকে। ফলে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে চুরি, ডাকাতি, গত তিন বছর ধরে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশী অংশে এবং বহির্নোঙ্গর ও সন্নিহিত এলাকায় জলদস্যুদের উৎপাতে জাহাজ ও আমদানি-রফতানি পণ্যের মালিকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠার পর হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যায় এই প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৯টি জাহাজ। কমিশনিং হয়েছে গত রবিবার। সেন্টমার্টিন থেকে খুলনা পর্যন্ত উপকূল এবং বহির্নোঙ্গর এলাকা জুড়ে কোস্টগার্ডের তদারকি এখন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে।
রিক্যাপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের পর থেকে হালনাগাদ চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গর এলাকার নৌদস্যুতার কোন ঘটনা ঘটেনি। যদিও চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বিশ^জুড়ে নৌদস্যুতার বহু ঘটনা ঘটেছে। পণ্য লুট থেকে শুরু করে ক্যাপ্টেন-ক্রুদের জিম্মি করে জাহাজ আটকিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের ঘটনাও রয়েছে। সূত্র জানায়, অতীতে চট্টগ্রাম বন্দরের মোহনা থেকে শুরু করে বহির্নোঙ্গর হয়ে গভীর সমুদ্র এলাকায় নৌদস্যুদের হামলে পড়ার বিভিন্ন ঘটনা ঘটত। এতে করে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যিক চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল। দেশের সমুদ্র বাণিজ্যকে নিরাপদ ও আশঙ্কামুক্ত রাখতে সরকারী কঠোর নির্দেশনা একে একে বাস্তবায়ন হতে থাকায় বর্তমানে বিশেষ করে বহির্নোঙ্গর ও বন্দরের মোহনা এলাকা নৌদস্যুতামুক্ত হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে বর্তমানে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও সরকারের কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে নির্মিত হচ্ছে ভাসমান অয়েল টার্মিনাল। এ টার্মিনাল থেকে সমুদ্র তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। বিদেশ থেকে মাদার ভেসেলযোগে ক্রুড অয়েলসহ জ্বালানি তেল আমদানির পর তা পাইপলাইনযোগে পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার অয়েল বেল্টে। এছাড়া মাদারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হওয়ার পর সেখান থেকে লাইটারিং প্রক্রিয়ায় পণ্য পৌঁছবে চট্টগ্রাম বন্দরে।