ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামেও নির্মাণ করা হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। বলা হচ্ছে, মেট্রোরেল নির্মিত হলে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার ওপর শুধু চাপই কমবে না, বাঁচবে সময়; ভূমিকা রাখবে অর্থনীতিতেও। সব মিলিয়ে পাল্টে যাবে বন্দরনগরীর চেহারা। আর এসব বিবেচনায় চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল র্যাডিসনে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে যে মেট্রোরেল হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আজকের দিনটি চট্টগ্রামের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শিগগির শুরু করা হবে। দাতা সংস্থা জাইকার সহযোগিতায় চট্টগ্রাম-কপবাজার সড়ককেও চার লেনে উন্নীত করা হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ক্যানার স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে টানেল উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামে যে মেট্রোরেল হবে, সেটা চট্টগ্রামের মানুষও ভাবতেও পারেননি। আমি কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন করছিলাম, চট্টগ্রামে যাতে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এখন মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই হতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপক টনি ইলহো জং বলেন, আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল, পাতালরেল করার লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করব। উড়ন্ত মেট্রোরেল হবে কিনা, তাও যাচাই করা হবে। এই কাজ শেষ করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। এটি চট্টগ্রামের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সড়কপথ ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রৌশন আরা মান্নান, অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিভগের সচিব শরীফা খান, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিরীন আকতার, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মেট্রোরেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম উদ্বোধনের পাশাপাশি এর সুফল ও বন্দরনগরীর পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো নিয়ে আলোচনা হয়। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৫৭ কোটি টাকা দেবে কোরিয়ার কোইকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ জুন পর্যন্ত।