নিউজ ডেস্ক :
ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণে রাত ২টা পর্যন্ত জেগে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রতিটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দুর্গতদের পাশে সরকারি কর্মকর্তাদের থাকতে বলেছেন। তাঁদের গতানুগতিক অবস্থার বাইরে এসে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার। এ সময় পরিকল্পনাসচিব সত্যজিত কর্মকার, কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনাসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ হিসাব বের করতে হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এসেছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া দ্রুত দুর্গত এলাকায় খাবার পানির ব্যবস্থা করতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন, ওই রাতেই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে ল্যান্ডফোনের গুরুত্ব সামনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারকে ল্যান্ডফোনে গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই একনেক সভাটি ঐতিহাসিক। প্রথম পিপিএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি প্রকল্প উপস্থাপন ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেক সভায় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৫৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে সাত হাজার ৮৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনাসচিব জানান, সভায় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে আট হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে চার হাজার ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে হোস্ট অ্যান্ড ফোরসিবিলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনালস ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন এনহান্সমেন্ট অব লিভস থ্রো এ মাল্টি-সেক্টরাল অ্যাপ্রোচ প্রজেক্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিলেটেড প্রজেক্ট এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চার হাজার ৪০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটিজ অ্যান্ড এফডিএমএন পপুলেশন প্রজক্ট অনুমোদন দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনাসচিব বলেন, মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের জন্য নেওয়া প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এক বছরের জন্য অনুদান দেবে। তা ছাড়া কিছু ঋণও দেওয়া হবে। শুরুতে বিশ্বব্যাংক ও দাতারা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য দিতে চেয়েছিল, পরে আলাপ করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও চাওয়া হলে তা দিতে রাজি হয়েছে। এসব টাকায় যোগাযোগ তথা রাস্তা, রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যে বন ও পাহাড় নষ্ট হয়েছে তা উন্নয়ন করা হবে। এসব বাস্তবায়ন করতে তিন-চার বছর সময় লাগবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে তা উন্নয়নে কাজ করা হবে।
সচিব জানান, বিশ্ব সাহায্য সংস্থা কথা দিয়েছিল তারা শুধু রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন করবে। পাশের জেলাগুলোর মানুষের ভৌত উন্নয়নে সার্বিকভাবে কাজ করতে হবে। এসব নিয়ে সমন্বয় করতে হবে। সাতটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এটি একসঙ্গে করাটা কঠিন। এটি চ্যালেঞ্জিং ও গুচ্ছ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনুমোদন দিয়েছেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্যা প্রকল্পগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ প্রকল্প। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চালের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফর রিপারপাসিং অব অ্যাগ্রিকালচারাল পাবলিক সাপোর্ট টুয়ার্ডস আ সাসটেইনেবল ফুড সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্প। বিআইডাব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক, আটটি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং দুটি স্লিপওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প।