শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কৃষক ॥ আমন থেকে আসবে দেড় কোটি টন চাল

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কৃষক ॥ আমন থেকে আসবে দেড় কোটি টন চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

  • আদিগন্ত মাঠে সবুজের সমারোহ
  • বন্যায় ক্ষতি কাটিয়ে নতুন উদ্যমে চাষাবাদ
  • রেকর্ড আউশ আবাদে বাম্পার ফলন
  • আমনের বীজেই ভর্তুকি ২০ কোটি টাকা

ওয়াজেদ হীরা ॥ নিশ্চিত ফসল বলা হয় আমনকে। আর সেই আমন ধানে এখন সবুজ ফসলের মাঠ। শস্যভা-ার সমৃদ্ধ করতে কৃষকের নিশ্চিত ফসল আমন থেকে আসবে দেড় কোটির বেশি মেট্রিক টন চাল। করোনায় বিশ্বে খাদ্য নিয়ে আশঙ্কার কথা বলা হলেও দেশের মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তায় স্বস্তিতে রাখতে চায় সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফার বন্যায় অনেক ফসলহানি হলেও আগামীর খাদ্য নিয়ে কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন শেষ হওয়ার আগেই আমনের আরও দেড় কোটি টন চাল যুক্ত হচ্ছে। গত বছর বোরোসহ উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ চার কোটি টন খাদ্য। ফলে খাদ্য নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই। আমনের নিশ্চিত ফসল ঘরে আনতে কাজ করছে সরকার আর মাঠে সোনার ফসলের যতœ নিচ্ছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় করোনার শুরু থেকেই খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দেয় সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা। করোনার শুরুর দিকে মাঠে বোরো ফসল ছিল যার ফলনও ছিল ভাল। আর কৃষকদের সেই বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই কাজ করতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সরকার প্রধানের দিকনির্দেশনা আর কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি সচিবের মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক তদারকিতে সোনার ফসলে ভরে কৃষকের ঘর সেই সঙ্গে দূর হয় খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাও। এরপর থেকেই পরবর্তী ফসল হিসেবে আউশ আমনকে বিশেষ করে আমনকে গুরুত্ব দেয় সরকার। সরকারের গুরুত্বের অংশ হিসেবে নানা ধরনের প্রণোদনাও দেয়া হয়। বন্যায় কয়েক দফায় আমনের বীজতলা ভেসে গেলেও সরকার বীজতলা তৈরি করে দেয় কৃষকদের।

সরকারের নানা সহযোগিতা আর মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের তদারকি ও নির্দেশনার ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় আমন ধানে এখন সবুজ মাঠ। গাঢ় সবুজ হওয়া ধানের চারায় কোথাও ফুল এসেছে। কোথাও পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন কেউ বা জমিতে সার দিচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে আমনের ফলনও ভাল হবে এবং বোরোর মতো ভাল দাম পাবে সে আশায় স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরাও। দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আমনের সর্বশেষ এসব খবর। যদিও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এখনও কোথাও কোথাও ফসলের মাঠে পানি রয়েছে। আর সর্বশেষ বৃষ্টিতে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা হিসেব করছে কৃষি বিভাগ।

বন্যা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কয়েক দফার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে আমন ধান উৎপাদন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ ক্ষয়-ক্ষতির পর্যবেক্ষণ করছি। এরপরেও যদি প্রয়োজন হয় কিছু আমদানি করব। এই দুর্যোগেও এখন পর্যন্ত দেশে খাদ্যের কোন সঙ্কট হয়নি। সামনের দিনগুলোতেও যে কোন পরিস্থিতিতে কোনক্রমেই যাতে মানুষের খাদ্য সঙ্কট না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সরকারের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের কোন মানুষের যাতে না খেয়ে কষ্ট করতে না হয় সেটার নিশ্চয়তা দেয়া।

উৎপাদন নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেছেন, বোরো ধান ঘরে উঠানো কৃষক এবং সরকার সবার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই ফলন ঘরে তোলার পর কৃষকরা বোরো ধানে ভাল দাম পায়। ফলে আউশ আমনেও আগ্রহ বেড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা সহায়তা করছি যাতে কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। আমরা আউশে ৬ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি। ভালমানের বীজ দিচ্ছি, সার দিচ্ছি আবার আমনেও বীজের দাম কমিয়েছি দশ টাকা। আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, এবার আউশের আবাদ বেড়েছে, ফলন খুবই চমৎকার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ধারণা করছেন, এই করোনার পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে খাদ্যভাব দেখা দিতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যাতে আমাদের দেশে এই খাদ্যের অভাবটা না আসে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুসারে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছি। আমরা সকলের সহযোগিতায় বোরোর ফসল ঘরে উঠিয়েছি, কৃষকও ভাল মূল্য পেয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও ফসল উৎপাদনে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জনকণ্ঠকে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কায় রাখতে চাই না। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর অধীন সকল কর্মকর্তা করোনা ঝুঁকির মধ্যেও অত্যন্ত সজাগ, সক্রিয়। যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা কৃষকের পাশে থেকে দেশে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুুল মুঈদ জনকণ্ঠকে বলেন, বন্যার পর আমাদের চলমান বৃষ্টিতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার চূড়ান্ত হিসেব চলছে। তবে আশা করছি আবহাওয়া ভাল থাকলে আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠব।

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, আউশ অল্প জমিতে লাগিয়েছিলাম আর বেশিরভাগই আমন। এখন চারাগুলোর দিকে তাকালে মনটা ভরে ওঠে, ভাল ফলন পাব আশা করি। বোরোতে ভাল দাম ছিল আমনে থাকলেই হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরের কৃষক রহিমুদ্দিন বলেন, আমনে বন্যা নাই, নিশ্চিত ফলন। এবার আবহাওয়া শুরুর দিকে সুবিধা না থাকলেও এখন আর সমস্যা নাই। সার দিচ্ছি চারাও দ্রুত বেড়ে উঠছে। মাওনার কৃষক তমিজ উদ্দিন অবশ্য আউশ ধানের ফলনেই খুশি। তিনি বলেন, আউশে এবার ভাল ফলন পাইছি। আমনেরটা এখনও বলতে পারি না।

এ বছর আমনের উৎপাদন ॥ এদিকে, এই বছর আমনে বাড়ানো হয়েছে জমি ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। কৃষি সম্প্রসারণের সরেজমিন উইং থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে মোট ৫৯ লাখ ১ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষ হয়েছে আরও বেশি জমিতে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত জমির চেয়েও বেশি জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ৫৯ লাখ ৩ হাজার ৪০১ হেক্টর অর্থাৎ ১৫৮৬ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এ বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪ হাজার ৩৯৮মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মোঃ আসাদুল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বশেষ বন্যায় ১ লাখ ৭ হাজার ২৯ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে যেখানে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর পুরোপুরি নষ্ট হবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার টন চাল কম আসতে পারে কিন্তু যেহেতু আমাদের আউশ উৎপাদন অনেক ভাল হয়েছে সেখানে আমাদের অনেক চাল হিসেবের চেয়েও বেশি পাব ফলে আমাদের উদ্বৃত্ত থাকবে। আমরা মনে করি আল্লাহর রহমতে খাদ্য নিয়ে কোন ধরনের সঙ্কট নেই, হবেও না। আমনেও কৃষক ভাল ফলন পাবে আশা করি। এবার আমনের ফলন ধরা হয়েছে বোনা আমনে হেক্টর প্রতি ১.২ টন আর রোপা আমনে হেক্টর প্রতি ২.৭৩ টন। এছড়াও গড় ফলন ধরা হয়েছে ২.৬৪ টন। ফলে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪ হাজার ৩৯৮মেট্রিক টন আসবে। এদিকে, গত অর্থবছরের ২০১৯-২০২০ মৌসুমে বোনা ও রোপা আমান মিলিয়ে মোট ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও চাল বেশি উৎপাদন হয়েছিল। এক কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ৯৯৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষ হয় ৫৬ লাখ প্রায় ২১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয়েছিল আরও ১৩ লাখ টন বেশি। সরেজমিন উইংয়ের পরিচাল মোঃ আসাদুল্লা বলেন, এবার কৃষককে আউশ আমন চাষে প্রণোদনা ও সহায়তা দেয়া হয়েছে। আমরা কৃষককে ভাল জাতের বীজ, যার অধিক ফলন হয়, সেসব বীজ দিয়েছি। এ কারণে এবার আউশ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। আর আমন তো বরাবর কৃষকরা করেই। করোনাসহ যে কোন মহামারী হলে খাদ্য সঙ্কট যাতে না দেখা দেয়। আমাদের দেশে যেন কোন খাদ্য সঙ্কট না হয়, সেজন্য ধানের উৎপাদন আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।

এদিকে, ব্রি মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, এখন অনেক স্থানে বাতাস ও বৃষ্টিতে ধান শুয়ে গেছে। কিছুটা ক্ষতি হবে আমরা স্ট্যাডি করছি। এর আগে ব্রি নিজস্ব এক জরিপের তথ্য দিয়ে ব্রি জানায়, নবেম্বরের মধ্যে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা থাকবে না। ব্রি গবেষণায় দেখা গেছে, চালের উৎপাদন গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমের উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে হিসাব করে, জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল ছিল। আগামী নবেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। ২০১০ সালে যেখানে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ। বর্তমানে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

আউশের বাম্পার ফলন ॥ এবছর রেকর্ডসংখ্যক জমিতে আউশ আবাদ করা হয়। ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে আউশ ধান কাটা। এবার আউশ ধানে বাম্পার ফলন ঘরে তুলেছে কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়। ফলে প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমি বেড়েছে এবার। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ২.৬ টন ফলন ধরা হলেও ২.৮ টন ফলন পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। অধিদফতরের প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে এবার ৩৭ লাখের বেশি টন চাল পাওয়া গেছে আউশ থেকে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বন্যায় কিছুটা ক্ষতি থাকলেও বাম্পার ফলনে ক্ষতি পুষিয়ে আরও বেশি চাল এসেছে।

শুধু আমনের বীজেই ভর্তুকি ২০ কোটি টাকা ॥ দেশে আমনের উৎপাদন বাড়াতে ১০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে এবার সরকারীভাবে আমন বীজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ১০ টাকা। এতে করে চলতি মৌসুমে সাড়ে ২০ হাজার টন আমন বীজ বিক্রি করতে সরকারকে বাড়তি প্রায় ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। তবে কেজিতে ১০ টাকা করে সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কমায় আমনের উৎপাদনও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেছেন, সরকারী সিদ্ধান্তে এবার কৃষকদের সুবিধার্থে এই ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

বন্যার প্রভাব পড়বে না ॥ গত কয়েক দিন ধরে নদ নদীতে পানি বেড়েছে। এছাড়াও সাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাতে অনেক স্থানের জমির ফসল তলিয়েছে যার ক্ষতির হিসেব এখনও চলমান। তবে এই সময়ের বাতাসে এবং বৃষ্টিতে ধান অনেক স্থানে শুয়ে পড়েছে। কোথাও কাইচ থোর এসেছে যা নষ্ট হচ্ছে। ফলে কিছুটা ফলনে আশঙ্কা দেখা দিলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আবহাওয়া যদি আর খারাপ না হয় তাহলে তেমন কোন সমস্যা হবে না। হয়তো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫-১০ লাখ মেট্রিক টন চাল কম আসতে পারে তবে সেটি সমস্যায় ফেলবে না। এছাড়াও জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে তিন দফায় বন্যায় ৩৭ জেলায় ১২ লাখের বেশি কৃষকের ক্ষতি হয় হেক্টরের পর হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, ওই সময় তিনদফায় বন্যায় ৩৭টি জেলায় সর্বমোট ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১ জন কৃষক। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর। এর পরও কোন কোন জেলায় পানি বেড়ে ফসল তলিয়ে গেছে। সাবেক কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আউশের আবহাওয়া এবার শুরু থেকেই ভাল, ফলনও ভাল। শুধু আউশে দুইলাখ হেক্টর জমি বেড়েছে। এতে এবার হেক্টর প্রতি ফলনও অনেক ভাল। ফলে যেটি ক্ষতি হয়েছে বন্যায় সেটি উঠে আসবে ফলে কোন সমস্যা নেই। বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনার কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়। স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার কৃষককে লালশাক, ডাঁটাশাক, পালং শাক, বরবটি, শিম, শসা, লাউবীজ ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ভিত্তিক বীজতলার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভাসমান বেডে এবং ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য আমন ধানের চারা উৎপাদন/বীজতলা তৈরি ও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষককে তিন কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকালাই বীজ, ডিএপি, এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা এসেছে। এ অবস্থায় করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের ফল-ফসলের আবাদ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবছরই উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে দিন দিন যে হারে কৃষি জমি কমে আসছে তারমধ্যেই সাফল্য পেতে সরকার সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নতজাত তৈরিসহ নানা ধরনের দিক নির্দেশনায় এই সাফল্য আসছে।

আরও দেখুন

রাণীনগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারপিট করে  ১৫ভরি স্বর্ণের ও 

১০০ভরি চান্দির গহনা ছিনতাই নিজস্ব প্রতিবেদক রাণীনগর,,,,,,,,,,  নওগাঁর রাণীনগরে দোকান থেকে বাড়ী ফেরার  পথে পথ …