শুক্রবার , ডিসেম্বর ২৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ঘুরছে বাংলা কারের চাকা, ৮ লাখেই নতুন মডেল

ঘুরছে বাংলা কারের চাকা, ৮ লাখেই নতুন মডেল

নিউজ ডেস্ক:
নিজস্ব নকশায় গাড়ি তৈরি করছে হোসেন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা কারস লিমিটেড’। নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটিতে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক গাড়ি তৈরি করে সেগুলো বিক্রিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যে গাড়িগুলোর ইঞ্জিনে লেখা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। অচিরেই রফতানি হবে বিশ্বের বড় বড় শহরে। আর দেশের বাজারে আট লাখ টাকা দামের বাংলা কার বিক্রি শুরু হবে আগামী বছরের শেষের দিকে।

একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলা কার নিয়ে বিস্তারিত জানালেন হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির হোসেন। তার সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ‘বাংলা কার-এর শো-রুমে। যেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৮ রঙের বেশ কয়েকটি বাংলা কার।

বাংলা কার-এর বিশেষত্ব সম্পর্কে বলুন।

জাকির হোসেন: বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেবে গাড়িটি। চার কোটি টাকা খরচ করে যে গাড়ি বাইরে থেকে আনা যায়, সেই গাড়ির সব সুযোগ-সুবিধাও মিলবে ‘বাংলা কার-এ। মার্সিডিজ-বিএমডব্লিউ গাড়ির গ্রাহকরা যে সুবিধা পান বাংলা কার-এ তা মিলবে মাত্র ৩২ লাখ টাকায়।

 বাংলা কার কিভাবে বিশ্বমানের গাড়ি তৈরি করছে?

জাকির হোসেন: আমরা দেশীয় ডিজাইনে গাড়ি ম্যানুফ্যাচার করছি। জাপানিজ ইসুজু ইঞ্জিন, চায়না বডি ও ইন্দোনেশিয়ার চেসিস দিয়ে গাড়িগুলো তৈরি করছি। বিশ্বের বড় বড় শহরে এই গাড়ি সরবরাহ করবো। ১৫০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি তৈরির সক্ষমতা আছে আমাদের। টাটার মতো আমরাও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করবো।

সাক্ষাৎকারে জাকির হোসেন

হোসেন গ্রুপ গাড়ির ব্যবসায় কেন?

জাকির হোসেন: দেশের বাইরে পড়ালেখার পর সেখানে চাকরি করেছি চার বছর। সেখানেই গাড়ি ব্যবসার পরিকল্পনা করি। দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যয় থেকেই এ যাত্রা শুরু। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যখন বাড়বে, তখন ধরে নিতে হবে দেশ উন্নত হচ্ছে। আর যেহেতু বাংলাদেশের কেউ গাড়ি তৈরি করে না তাই এটি সম্ভাবনাময় খাত। এরপর ৫ বছর লেগেছে শুরু করতেই। এ সময় বিশ্বের সেরা চারটি গাড়ি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা হলো, ইসুজু, ইন্দোনেশিয়ার ডিএফএসকে, ডংফিন চায়না ও কিংস্টার চায়না। এই চার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পর এখন পর্যন্ত ১১৪টি বাংলা কার ঢাকার রাস্তায় চলছে।

এই চার কোম্পানির ভূমিকা কী?

জাকির হোসেন: গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং করছে বাংলা কারস লিমিটেড। ডিজাইন করেছে বাংলা কার। প্রয়োজন অনুযায়ী ওই চার কোম্পানির সহযোগিতা নিচ্ছি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজটা তারা করছে। স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।

বাংলাদেশের গাড়ির ব্যাপারে বিদেশি চার কোম্পানির আগ্রহ কেমন?

জাকির হোসেন: প্রথমে বাংলাদেশের নাম শুনে আমাকে পাত্তাই দেয়নি। তারপর তাদেরকে বোঝাতে পেরেছি। এরপর তারা চুক্তি করতে রাজি হয়। এখন এই চার প্রতিষ্ঠানও বাংলা কার নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।

বাংলা কার-এর চাহিদা কেমন হবে বলে মনে করেন?

জাকির হোসেন: ফ্যাক্টরির সব কাজ শেষ হয়েছে গত বছরেই। কিন্তু পুরো বছরই গেল লকডাউনে। এতে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম হয়েছে। গত মে মাস থেকে অর্ডার নেওয়া শুরু করেছি। গত দুই মাসে ১১৪টি বিক্রি হয়েছে। আরও ৪২টি গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি চলতে শুরু করবে। কিছুদিনের মধ্যেই হস্তান্তর হবে। সেই হিসাবে এ পর্যন্ত ১৫৬টি বিক্রি হলো বলা যায়।

জাকির হোসেন

: বাংলা কার-এর সু্যোগ-সুবিধা নিয়ে বলুন।

জাকির হোসেন: সহজভাবে বললে কোটি টাকা দামের নতুন গাড়ি আমরা দিচ্ছি ৩২ লাখ টাকায়। ক্রেতাদের ৫ বছরের জন্য কোনও চিন্তা করতে হবে না। ব্র্যান্ড নিউ বাংলা কারে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি থাকছে। গাড়িগুলো ডিএফএসকে গ্লোরি মডেলভিত্তিক, যা ইতোমধ্যে বাজারে রয়েছে। একশ’টিরও বেশি ভয়েস কমান্ডসহ একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভার্চুয়াল সহকারী রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া কনসোল কন্ট্রোলার দ্বারা চালিত একটি ৯ ইঞ্চি ইন্টারফেসের ইনফোটেইনমেন্ট ডিসপ্লে আছে। সহজ সংযোগের জন্য একটি নেভিগেশন সিস্টেম ও ইউএসবি পোর্ট আছে।

সাত আসনের গাড়িতে প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে পা রাখার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তৃতীয় সারিটি শিশুদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারযোগ্য। এসইউভিতে আছে একটি সমৃদ্ধ অডিও সিস্টেম।

এ ছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি পার্কিং ক্যামেরাসহ টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম এবং পার্কিং সেন্সর রয়েছে। দুই স্তরবিশিষ্ট প্যানোরামিক সানরুফও আছে।

ব্যাংক ঋণে বাংলা কার কেনা যাবে?

জাকির হোসেন: শতভাগ ব্যাংক ঋণে আমাদের গাড়ি কিনতে পারবেন গ্রাহক। সিটি ব্যাংকসহ এ পর্যন্ত ১০টির মতো ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ৬৫টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে।

রি-কন্ডিশনড গাড়ি ও বাংলা কার-এর মধ্যে পার্থক্য কী হবে?

জাকির হোসেন: রি-কন্ডিশনড গাড়ি কমদামে পাওয়া গেলেও পরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বাংলা কার-এ নতুন মডেলই পাওয়া যাচ্ছে কম দামে। আটটি বিভাগীয় শহরে শো রুম দিয়েছি। সবগুলো জেলা শহরে ডিসট্রিবিউটর দেওয়া হবে। বিদেশেও ডিসট্রিবিউটর দেবো।

শুরুতে কী ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন?

জাকির হোসেন: গাড়ির ব্যবসা সম্ভাবনাময়। আমাদের টার্গেট মূলত দেশের মধ্যবিত্তরা। পাশাপাশি রফতানিও করা। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারে টিকে থাকতে বন্ড লাইসেন্স দরকার। বন্ড লাইসেন্স হলে মোটর পার্টস তথা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ আনা সহজ। আন্তর্জাতিক বাজারে এই গাড়ি জনপ্রিয় করতে বন্ড লাইসেন্স লাগবেই।

যেহেতু ৯৫ শতাংশ মোটর পার্টস আমদানি করতে হয়। তাই এটা জরুরি। বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আনতে সরকারকে উচ্চ কর দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজের ভাড়াও বেড়েছে। শিপিং খরচ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। যদি বন্ড লাইসেন্স পাই ও বিনা শুল্কে পার্টসগুলো আনতে পারি তবে বড় অনেক দেশে গাড়ি রফতানি করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হলে বড় উদ্যোক্তারাও এ খাতে বিনিয়োগ করবে।

মোটর পার্টস বা যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি হবে কবে?

জাকির হোসেন: একটি গাড়ি তৈরিতে প্রায় দুই হাজার ধরনের যন্ত্রাংশ লাগে। আমরা ভালো ম্যানুফ্যাকচারিং করতে পারলে দেশেই তৈরি হবে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তথা যন্ত্রাংশ। অবশ্য দেশে এমন কিছু কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

তবে দুই হাজার যন্ত্রাংশের জন্য দেড় থেকে দুই শ’ ফ্যাক্টরি থাকা দরকার। যেটা এখন সম্ভব নয়। পার্টসগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা গেলে ভালো হতো। আপাতত যে দেশের যে যন্ত্রাংশের কোয়ালিটি ভালো, আমরা সেখান থেকেই আমদানি করছি।

বছরে কতগুলো বাংলা কার বিক্রির আশা করছেন?

জাকির হোসেন: বিদেশি চার কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেই অনুযায়ী বছর অন্তত পাঁচ হাজার গাড়ি বানাতেই হবে। অর্থাৎ বছরে পাঁচ হাজার বিক্রি করতে হবে।

পিএইচপিসহ কিছু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি দেশে তৈরি করে বাজারজাত করছে। তাদের সঙ্গে বাংলা কার-এর পার্থক্য কী?

জাকির হোসেন: পিএইচপি তৈরি করছে প্রোটনের গাড়ি, প্রগতি মিতশুবিসির গাড়ি। আমাদেরটা নিজস্ব নকশার গাড়ি। অন্যরা ভালো গাড়ি বিক্রি করলেও বিদেশি ব্র্যান্ডের বাইরে আসার সুযোগ নেই। আমি আমার মতো করে গাড়ির ব্র্যান্ডিং করতে পারবো। ভেতরকার সুযোগ-সুবিধা যোগ করতে পারবো। সবচেয়ে বড় কথা আমি মেড ইন বাংলাদেশ লিখতে পারবো।

অচিরেই আমরা লরি, ট্রাক, কার, পিকআপ, বাসসহ ১২ ধরনের গাড়ি নামাব। তাছাড়া ইলেকট্রিক গাড়িও তৈরি হবে। ১২টি গাড়ি নতুন নামে ব্রান্ডিং করবো।

করপোরেট অর্ডার বেশি, নাকি ব্যক্তিগত?

জাকির হোসেন: আপাতত ব্যক্তিগত অর্ডার বেশি। তবে বড় বড় কোম্পানি তাদের এমডি ও ম্যানেজার পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জন্য বাংলা কার-এর করপোরেট অর্ডার দিচ্ছে। এসএসএফ ও পূবালী ব্যাংক অর্ডার দিয়েছে।

সর্বনিম্ন কত টাকায় বাংলা কার পাওয়া যাবে, সেটা কবে আসবে?

জাকির হোসেন: এখন অন্য মডেলগুলোর অর্ডার নিচ্ছি। তবে সব স্বাভাবিক থাকলে আগামী বছরের শেষের দিকে ৮ লাখ টাকা দামের নতুন মডেলের গাড়ি পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার গাড়িও থাকবে বাংলা কার-এ। মধ্যব্ত্তি থেকে উচ্চবিত্ত, সবাই বাংলা কার কিনতে পারবে।

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জাকির হোসেন: আমি মনে করি, পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে বিশ্বের বড় বড় শহরে অন্তত ১ শতাংশ বাংলা কার থাকবে। বন্ড লাইসেন্স দিলে বাংলা কার-এর কারণে বছরে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে সরকার।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …