নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে ঘরহারা চার হাজার ৪০৯ পরিবারকে বিনা মূল্যে ঘর দিচ্ছে সরকার। স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে উপকূলে নানা দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করা মানুষগুলো।
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার কুইজ্জাটেক এলাকায় বসবাস ছিল মুহিবউল্লাহর। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু হারিয়ে যায় তার। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।
পরে কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে চলে আসেন কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায়।
সেই থেকে অস্থায়ী কুঁড়ে ঘরে কোন রকম দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি ও তার পরিবার। প্রতি মাসে ওই নাজুক বাড়ি সংস্কার করতে করতে ক্লান্ত তিনি। যে কোন দুর্যোগ আসলে মালামাল গুটিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়।
সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মুহিবউল্লাহর কাছে নিজের একটা বাড়ি যেন আকাশ-কুসুম ব্যাপার। সেই মুহিবউল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এখন বিনামূল্যে ফ্ল্যাটের মালিক।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট পাওয়া মুহিবউল্লাহ। ছবি: নিউজবাংলা
২৯ বছর কুঁড়ে ঘরে থাকা মুহিবউল্লাহ এখন খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ‘কামিনি’ ভবনে বাস করবেন।
কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বাঁকখালী নদীর তীরে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নতুন ঠিকানা হয়েছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৬৮২ একর খাস জমি বরাদ্দ সহকারে খতিয়ান চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই খতিয়ানে যাদের ঘরবাড়ি পড়েছে তাদের খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে।
মুহিবউল্লাহ নিউজবাংলা কে জানান, পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সাগরে মাছ ধরে সংসার চলে তার। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এখন থেকে নিজের ফ্ল্যাটেই থাকতে পারবেন বলে খুব খুশি তিনি।
তিনি আরও জানান, সন্তাদের জন্যও তিনি পেলেন শান্তির নীড়। সরকারিভাবে পাকা ভবনে আধুনিক সুবিধায় ফ্ল্যাট পাবে, তা কখনো ভাবেননি তিনি।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল নিউজবাংলা কে বলেন, প্রকল্পে প্রায় চার হাজার ৪০৯ পরিবারের পুনর্বাসন করা হবে। স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে উপকূলে নানা দুর্যোগের সাথে লড়াই করা মানুষগুলোর।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৩৯ টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে ২০টি। ২০টি ভবনে ৬০০ ফ্ল্যাটে ৬০০ পরিবার উঠবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ২৩ জুলাই কক্সবাজারে বৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২০টি ভবন উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দের কাজ শুরু হয়েছে।
এ প্রকল্পে আরও ১১৭টি পাঁচ তলা ভবন নির্মিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন। বাকি ১১৭টি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।