নিউজ ডেস্ক:
পরিবেশ সহনশীল গ্রিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরকে। এজন্য বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (সিইটিপি), ডিস্যালাইনেশন প্লান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওয়েস্ট সোর্টিং ফ্যাসিলিটি, রুফটপ ও ফ্লোটিং সোলার স্থাপনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষরোপণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গত সভায় এজন্য ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক ৩৯৬৭ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-এর আওতাধীন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক এলাকায় অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের টেকসই ও পরিবেশ সহনীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ফলে দেশীয় ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, দ্রুত শিল্পায়ন, পণ্যবহুমুখীকরণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে বিধায় তা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
বেজা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে ৯৯০ দশমিক ৪১ একর ভূমি উন্নয়ন, ১ দশমিক ২৭ লাখ বর্গমিটার বৃক্ষরোপণ ও ট্রি-গার্ড, ইনভেস্টর ক্লাব নির্মাণ, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, মসজিদ নির্মাণ, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, শিশু পরিচর্যা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ড্রেনেজ অবকাঠামো (স্টর্ম ওয়াটার), ৪০ কিলোমিটার স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক, ২৮ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি এনভায়রনমেন্টাল ল্যাব ও মনিটরিং সিস্টেম, বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (সিইটিপি), ডিস্যালাইনেশন প্লান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওয়েস্ট সোর্টিং ফ্যাসিলিটি, রুফটপ ও ফ্লোটিং সোলার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, মিরসরাইয়ের প্রতিবেশী উপজেলা সীতাকুণ্ড থেকে শুরু করে পাশের জেলা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে এখন ৩০ হাজার একরের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ঘুড়ে দেখা গেছে দেশের বৃহত্ শিল্পগোষ্ঠীর অনেকগুলোই তাদের শিল্প নির্মাণকাজ শুরু করেছে। প্রকল্প এলাকায় ইতিমধ্যে গ্যাস-বিদ্যুত্ দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ তৈরির কাজ চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে পৃথক রোড নেটওয়ার্কের আওতায় সাগরপারে নির্মিত হচ্ছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ-কাম সড়ক। ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ইস্পাত, অটোমোবাইল, বস্ত্র কারখানা, রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা, পেইন্ট কারখানা, ওষুধ ও রসায়ন শিল্পসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
অর্থনৈতিক স্থবিরতার বছরেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে। বেজা সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী বছরের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০৮ কোটি ডলার বা ৩৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা সমপরিমাণ (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা হিসাবে) বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে। গেল ২০২০ সালের পুরোটা জুড়েই করোনার আঘাত অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সারা বিশ্বে বছরের শুরুতে লকডাউন এবং স্থবিরতা শুরু হলেও বাংলাদেশে মূলত মার্চ মাস থেকে বিরূপ প্রভাব শুরু হয়। দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি এবং লকডাউনের প্রভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেমে আসে স্থবিরতা।
নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা ছিল বছর জুড়েই। এর পরেও আশার আলো জুগিয়েছে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো। বেজা গভর্নিং বোর্ড ইতিমধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ ও জমির পরিমাণ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ৬৮টি এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টি। বেজা সূত্রে জানা যায়, গত বছর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনাকালে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা হয়েছে প্রায় ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ (২৬ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা)। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রায় ৫৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার (৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা) এবং স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার (২২ হাজার ৭৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। সর্বমোট বিনিয়োগের প্রস্তাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭০৭ কোটি মার্কিন ডলার (২ লাখ ৩০ হাজার ৯৫ কোটি টাকা) প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।