বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / গ্যাসের বিকল্প বাজারের সন্ধান, কাটছে সংকট

গ্যাসের বিকল্প বাজারের সন্ধান, কাটছে সংকট

নিউজ ডেস্ক:
স্পট মার্কেটে যখন গ্যাসের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী তখন তা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আনা এলএনজি আর দেশীয় গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই চলছে বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাত। আর তাই জ্বালানি সংকটে বিঘœœ ঘটছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এমনকি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। এমন অবস্থায় নতুন উদ্যমে দেশীয় কূপ খননের ধারাবাহিকতায় একের পর এক কূপ থেকে মিলছে গ্যাসের সন্ধান।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০২২-২০২৫ সময়কালের মধ্যে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্ক ওভার কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপে প্রায় ৩৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন কাজ শুরু করে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৫২৪ মিটার গভীরতায় খনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। গত ৩ নভেম্বর এখানে ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে বলে জানান খোদ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এই খনন কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কূপে ৩০ থেকে ৩১ বছর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। তিনি জানান, এই গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০৫৯.০৮ কোটি টাকা।

আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও কূপটিতে কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। এরপর আমরা এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারবো। তিনি জানান, কূপের তিন হাজার ৪৫৪ মিটার গভীর থেকে পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে এখন গ্যাসের চাপ রয়েছে তিন হাজার ১০০ পিএসআই। তিনি বলেন, এই কূপের কাজ শেষ করার পরপরই আমরা সিলেটে আরও ৪টি কূপে অনুসন্ধান কাজ শুরু করব। এই কূপগুলো হলো কৈলাশটিলা-২, কৈলাশটিলা-৫, সিলেট-৭, রশিদপুর-৫। আশা করছি এসব কূপেও গ্যাস পাওয়া যাবে।
বাপেক্স বলছে, বর্তমানে দেশে বাপেক্স দৈনিক ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। এছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) উৎপাদন করছে ৬১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড উৎপাদন করছে ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সব মিলিয়ে এই তিন কোম্পানি দৈনিক মোট ৮৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। আর বাকিটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শেভরন আর আমদানি করা এলএনজি। কিন্তু এই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে আগামী তিন বছর নতুন করে কূপ খনন করার পাশাপাশি বিকল্প বাজারের সন্ধানে ছিল সরকার।

আর এবার তাই পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশে সফরকালে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার কৌশল খুঁজে বের করতে সম্মত হয়েছিল।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস আনতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ে টিম পাঠাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস কীভাবে নিয়ে আসা যায় দেশটি থেকে সে বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। আমরা তাদের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি। এখন তো সব জায়গাতেই সংকট। যে যেভাবে পাচ্ছে সেভাবেই নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের ব্রুনাইয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। আমাদের কি প্রয়োজন দেশটির দায়িত্বশীলদের কাছে আমরা জানিয়েছি। তাদের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখন দেখা যাক কি হয়।
শুধু তাই নয় সৌদি আরব থেকেও গ্যাস আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার সৌদি অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তাদের মন্ত্রী আসছেন। ২০২৮-২৯ সালের দিকে সৌদি আরব থেকে গ্যাস নিতে পারবো। আমাদের এখানে সোলারের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারেও কথা হয়েছে।

তারা সোলারের ক্ষেত্রে ১০০০ মেগাওয়াট এমওইউ করার কথা জানিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীবছর ১০০-১১০ এমএমসি গ্যাস পাবো। পাওয়ারের রিক্রয়্যারমেন্ট ১০ শতাংশ বাড়বে। এদিকে সমুদ্র থেকে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাগর থেকে গ্যাস তোলার জন্য দুইবার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আবারও এখানে টেন্ডার দেওয়া হবে। সাগর থেকে গ্যাস তোলা কষ্টসাধ্য। বিনিয়োগ করেও সফলতা পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে না। বাপেক্সকে দিয়ে এটা করা যাবে না। তবে বাপেক্স বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে কাজ করতে পারে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, বর্তমানে কাতার থেকে বার্ষিক ১.৮ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সাল থেকে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। কাতারের রাশ লাফান লিক্যুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ওই চুক্তির আওতায় বার্ষিক ১.৮ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

সাইড লেটার চুক্তির মাধ্যমে এর অতিরিক্ত হিসেবে বছরে আরও ১ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু কাতার তাতে সাড়া দেয়নি। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি কাতারের দোহায় দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে (এফওসি) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কাতারকে আরও বেশি পরিমাণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

কিন্তু কাতার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগে বিদ্যমান চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহ করতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে দেশীয় কূপ খননের উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের টবগী-১ কূপের খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …