বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ১৪ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / গোদাগাড়ীর আদিবাসী শিশুরাও শিখতে চায়

গোদাগাড়ীর আদিবাসী শিশুরাও শিখতে চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ীঃ
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাধীন মাটিকাটা ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম চৌদুয়াড়। এই গ্রামটি প্রায় ২০ বছর আগে গড়ে ওঠে। উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এই গ্রামটি। এই গ্রামে মোট ১০৮ টি পরিবারের বসবাস, এর মধ্যে ১৩ টি পরিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং বাকিগুলো সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী। এদের জীবন যাত্রার মান খুবই সহজ এরা প্রায় কৃষিকাজ ও পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই একসাথে কাজ করে। নারী পুরুষের পারিশ্রমিকে বৈশাম্য থাকলেও নারী পুরুষ একসাথে সমান কাজ করে। একটু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলেই তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য নেমে পড়ে মাঠে। অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে থাকে।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসা শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা অনেক পিছিয়ে। কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার জন্য একটিমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে, সেটি হল চৌদুয়াড় শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। যা অনেকটাই ব্যবহার অনুপযোগী বাড়ীর গোয়াল ঘরের সাথে সংলগ্ন। পানি কাদায় ভর্তি এই স্কুলটিই একমাত্র ভরসা এই গ্রামবাসীর। মোট ৮৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এখানে নার্সারী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে শিশুরা। কেবলমাত্র দুজন শিক্ষকের চলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, শিক্ষা উপকরণ সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক কম এখানে।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নরতন বলেন, স্কুলে বিদুৎ না থাকায় আমাদের খুব কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়। প্রতিদিন তিনটি বিষয়ে ক্লাস করি আমরা। বেশি বেশী ক্লাস হলে আমাদের লেখা-পড়া আরো ভালো হবে। স্কুলের পাশে খেলাধুলার মাঠ নেই তেমন।

তবে এ বিষয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক সান্ত্বনা রায় বলেন, এনজিও ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের কারণে দুজন মাত্র শিক্ষক দিয়েই চলে এই স্কুলটি। বিদুৎ থাকলে ছোট ছোট কমলমতি শিশুদের ভালো হয়। শিক্ষক কম থাকার কারণে তিন ভাগে ভাগ করে ক্লাস নিতে হয় আমাদের। সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত নার্সারী, শিশু ও ১ম শ্রেণী, দশ থেকে একটা পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাস নিতে হয়। এলাকার শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হলে আরো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে।

এই স্কুলশিক্ষিকা আরও বলেন, স্কুল থেকে লেখা-পড়া করে এই গ্রামের একজন ছাত্র পুলিশ সদস্য হয়েছেন। এমনকি এই গ্রামের ডিগ্রী পাস করেছে এমন ছেলে মেয়ে আছে সাতজন, এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করা ছেলে মেয়ে রয়েছে অর্ধশতেরও বেশী। বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া শেষ করে তারা যাই সোনাদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যা এই গ্রাম থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো হলে আরও প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে বের হয়ে আসবে এই গ্রাম থেকে মনে করে এই শিক্ষিকা।

গ্রাম প্রধান জহরলাল পান্ডে বলেন, গ্রামের মানুষ প্রায় কৃষি নির্ভরশীল লেখা-পড়ার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই কোন পরিবারের। তবে বর্তমানে কিছুটা হলেও এলাকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, এই গ্রামের ছেলে মেয়েরা লেখা-পড়া করে যদি কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারী হয় তাহলে এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ আরও অনেক গুণে বেড়ে যাবে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন বা এ বিদ্যালয়টি সম্প্রসারণ করে বড় করা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ মহল বলেন, এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এনজিও গুলো দেখভাল করে শুধু সরকারের কাছে তথ্য-উপাত্ত রাখার জন্য আমরা বাৎসরিক ডাটা কালেকশন করে থাকি এবং প্রতিবছর পাঠ্যবইসহ বোর্ড সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আমরা দিয়ে থাকি। এখানে নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নাই কারণ একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের দূরত্ব দুই কিলোমিটার হতে হবে। তবে এনজিওগুলোর সাথে কথা বলে এসব এলাকার হতদরিদ্র আদিবাসী শিশুদের লেখাপড়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এসব বিদ্যালয়ের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে বলব।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত 

নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,,,,, কৃষিই সমৃদ্ধি এই প্রতিপাদ্যে বগুড়ার নন্দীগ্রামে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার …