নিউজ ডেস্ক:
১৯৯৭ সালের ১৯ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে কক্সবাজার জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বহু পরিবার। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ২০ মে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। গৃহহীন ওইসব পরিবারকে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বস্তিবাসী ও ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ঘরহীন মানুষের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছে। সরকার চায়, আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কেউ যেন গৃহহীন না থাকে। ঠিক এমন প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস।
সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৮৬ সাল থেকে সারাবিশ্বে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ বছরও বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে, ‘নগরীয় কার্যক্রম প্রয়োগ করি, কার্বনমুক্ত বিশ্ব গড়ি’।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে সরকার। এর পরই ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের পর প্রত্যেক গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিতে বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন আট লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯২ হাজার ২৮৩। এ ছাড়া জমি আছে; কিন্তু ঘর নেই- এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০টি। এসব পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সেই হিসাবে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৫ হাজার ৮২ কোটি টাকা। আগামী মার্চের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।
ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার কাজ চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিনটি ধাপে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর মাধ্যমে এরই মধ্যে তিন লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্তমানে আরও দুই লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ চলমান। একতলাবিশিষ্ট দুই বেডের এই পাকা বাড়িতে থাকছে ড্রইংরুম, বারান্দা, টয়লেট, কিচেনসহ একটি পরিবারের বসবাসের উপযোগী বাসগৃহ।
এদিকে রাজধানীর বস্তিবাসীর বাসস্থানের জন্য এরই মধ্যে পাঁচটি বহুতল ভবন তৈরি করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৫৩৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এরই মধ্যে কিছু ফ্ল্যাট বস্তিবাসীদের নামে বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। এসব প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশের কেউ যেন গৃহহীন না থাকে। মুজিববর্ষে সরকার চায়, দেশের কেউ যেন গৃহহীন না থাকে। সে লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউটের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারের এই প্রকল্প আগামী বছরে শেষ হলেই যে দেশে গৃহহীন থাকবে না, এটা বলা যাবে না। প্রতিবছরই দেশে নতুন গৃহহীন তৈরি হয়। কোথাও নদীভাঙনের কারণে; কোথাও অন্য কোনো কারণে।