নিজস্ব প্রতিবেদক,গুরুদাসপুর
নাটোরের গুরুদাসপুরে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকিমারা হলুদ ও বেগুনি ফুলকপি সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ও নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে প্রথম বারের মত পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল আলিম। চারা রোপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মত।
প্রথম চাষেই কৃষক আব্দুল আলিমের এমন সফলতা দেখে এখন অন্যান্য কৃষকরাও এই ফুলকপি চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন। কৃষক মো. আব্দুল আলিম জানান, গুরুদাসপুর কৃষি বিভাগের পরামর্শে সাহস করে মাত্র ১৭ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ২০০ চারা রোপন করেছিলেন তিনি। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই এ ফসল চাষাবাদ করেছেন।
তবে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন তিনি। সাদা ফুলকপির মতই চাষাবাদ খরচ হলেও তুলনামুলক ভাবে এই ফসলে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়েছে। ১৭ শতক জমিতে চারা রোপন, পরিচর্যা, জৈব সার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার সহ মোট খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। তার জমিতে বেগুনী ও হলুদ রংয়ের ফুলকপি ছিল। প্রথম দিকে প্রতি কেজি ফুল কপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পরে গড়ে ৬০ টাকা কেজি হিসাবে এই ফুলকপি বিক্রি হয়। বেগুনী রঙ্গের কপি প্রতিটা ২ থেকে আড়াই কেজি এবং হলুদ রংয়ের কপির ওজন প্রায় ৩ কেজি হয়ে থাকে।
সাদা কপির চেয়ে এই কপির দাম বেশি হলেও মানুষ এই কপি কিনতে বেশি আগ্রহী। অনেকে জমি থেকেই কিনছেন আর স্থানীয় হাট—বাজারে তোলার পর সবজি বিক্রেতারাই বেশি চাহিদা দেখাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, তার সফলতা দেখে এখন অনেকে এই রঙ্গিন ফুলকপি চাষাবাদের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাই আগামিতে বড় পরিসরে রঙ্গিন ফুলকপির চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার। পাশাপাশি অন্যদেরও এই সবজি চাষাবাদে উৎসাহিত করবেন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, এই প্রথম তারা এ ধরনের ফুল কপির চাষাবাদ দেখেছেন। সাদা ফুল কপির চেয়ে এই কপির স্বাদ একটু আলাদা মনে হয়েছে। তাছাড়া দেখতেও সুন্দর, খেতেও অনেক মজা। হলুদ— বেগুনী রঙ্গের ফুলকপির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছেন অনেকে। স্থানীয় কাছিকাটা বাজারের সবজি বিক্রেতা জালাল সরদার ও আইয়ূব আলী বলেন, বাজারে সাদা ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুনর রশীদ জানান, নাটোরে এটাই প্রথম রঙ্গিন ফুলকপি চাষ। রঙিন ফুলকপি চাষে জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কম লাগে। রঙিন ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির তুলনায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য কৃষক দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন।
কৃষক আব্দুল আলিম নিজের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। আগামিতে এর প্রসার ঘটাতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।