নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুরঃ
হঠাৎ করেই নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রথমবারেরমত করোনা পজিটিভ হয়েছেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের সংম্পর্শে আসা নাজিরপুর ইউনিয়নের দুই গ্রামের ২০ পরিবার রয়েছেন ঘরবন্দী। কিন্তু গ্রামবাসীর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও অসহযোগীতার কারনে খাবারসহ পানীয়জল নিয়ে পড়েন বিপাকে পড়েন ওই পরিবারগুলো।
পরিস্থিতি বিবেচনা ও এসব পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ১৪দিনের খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী নিয়ে দুই গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে গতকাল বৃহষ্পতিবার উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর ও গোপীনাথপুর গ্রামের হোমকোয়ারিন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর মাঝে ওই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন জানান, হঠাৎ করেই প্রথমবারেরমত উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর ও গোপীনাথপুর গ্রামের দুই ব্যক্তির শরীরে গত মঙ্গলবার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিরপুর ইউনিয়নকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপণজারী করে উপজেলা প্রশাসন।
ওই ঘটনার পর থেকে ওই দুই গ্রামের মানুষ করোনা পজিটিভ দুই ব্যক্তি ও তার সংম্পর্শে আসা আশপাশের পরিবারগুলোর সাথে সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ সব ধরনের আদান প্রদান বন্ধ করে দেয় গ্রামের মানুষ। এতে বিপাকে পড়ে এসব পরিবারগুলো। দেখাদেয় খাদ্য সংকট।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারগুলোকে খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন তিনি। সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, আলু, কাঁচামরিচ, তেল খেজুর মুড়িসহ ১২ পদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয় পরিবারগুলোকে।
বৃহষ্পতিবার বিকালে স্বেচ্ছাসেবকদেও সহায়তায় নিজস্বপরিবহনে ওই খাদ্য সামগ্রীগুলো প্রত্যকটি পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হয়। করোনা আতঙ্কের ঝুঁকি এড়াতে তালিকাভুক্ত ব্যক্তির বাড়ির সামনে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটগুলো রাখা হয়। প্রতিবেশিদের সহায়তায় নাম ধরে ডেকে ডেকে প্যাকেটগুলো সরবরাহ করা হয়।
করোনা সনাক্ত দুই ব্যক্তি ও তাঁদেও প্রতিবেশিরা জানান,- করোনা সনাক্ত ও তাঁদের সংম্পর্শে থাকার কারনে গ্রামের মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন তাঁদের। সাহায্য সহযোগীতা দূরের কথা অনেকে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে চলম খাদ্য সংকটে পড়েছেন ওই পরিবারগুলো। উপজেলা চেয়ারম্যানের খাদ্য সামগ্রীগুলোতে কমপক্ষে ১০দিন চলে যাবে তাঁদের।
নাজিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শওকতরানালাবু, মুঠোফোনে জানান, করোনা পজিটিভ একটি পরিবারে টিউবয়েল নেই। পানীয়জলের সংকট নিরসনে গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটছে হোমকোয়ারিন্টিনে থাকা পরিবারগুলো। তাছাড়া করোনা আতঙ্ক থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গ্রামের পথে পথে বাঁশ টানিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ইউনিয়নের মানুষগুলোর মধ্যে করোনা ভীতি থাকলে হোমকোয়ারিন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর প্রতি মানবিক নয়।
উপজেলা জুড়ে করোনাভীতি ছড়িয়ে পড়লেও মানুষের মাঝে সচেতনতা অনুসরণের প্রবনতা কম। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষগুলো ঘরবন্দী থাকায় ঘরেঘরে খাদ্য সংকট বিরাজ করছে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন। তার ধারাবাহিকতায় করোনায় হোমকোয়ারিন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন