নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে এই গুজব ছড়িয়ে ছেলেধরার নামে গণপিটুনির মতো অপরাধ রুখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে র্যাব, পুলিশসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত একাধিক বাহিনী। গুজবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ এমন ভিত্তিহীন গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ধরনের হত্যা বন্ধে পুলিশের সব ইউনিটকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এছাড়া র্যাবের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে বিশেষ মনিটরিং সেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরের মাধ্যমে যেসকল আইডি বা পেজ থেকে এই ধরণের গুজব ছড়ানো হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনছে র্যাব। এই পর্যন্ত র্যাবের হাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আটক হয়েছে ১০ জন গুজব রটনাকারী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে সকল ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক টহল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং ও মিডিয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা নিতে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (অপারেশনস) সাঈদ তারিকুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত ২১ জুলাই পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, গভর্নিং বডির সদস্য এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ছুটির পর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে স্কুল ত্যাগের বিষয়টি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ও আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন এবং সচল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা প্রদান করে।
জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি এলাকায় ছেলেধরা সংক্রান্ত গুজবে কান না দিতে এবং পুলিশকে তাৎক্ষণিকজানানোরজন্যমাইকিংকরা, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করতে হবে। এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুধীসমাজ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতিনিধি এবং জনসাধারণকে নিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনিটরিং সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব,ব্লগ এবং মোবাইল ফোন) ছেলেধরা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, মন্তব্য বা গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকব্যবস্থাগ্রহণকরতেহবে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গুজবে কান না দিয়ে এবং ছেলেধরা বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোতে সার্বক্ষণিক তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।