সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি বিষয় বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিষয়টি হলো গুজব। সরকার বিরোধী একটি চক্র বেশ কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু ও ছেলেধরা নিয়ে গুজব ছড়ায়। এই গুজবকে কেন্দ্র করে পুরো দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুজব ছড়ানো হয় পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগবে। এই মাথার জন্য দেশে কয়েকটি দলে ছেলেধরারা কাজ করছে। গুজবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা যায় কয়েকজন মানুষ। পরবর্তী খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাদের গণপিটুনি দেয়া হয়েছিলো তারা ছেলেধরা ছিলেন না। ছেলেধরা সন্দেহে জনরোষে পড়ে গণপিটুনিতে মারা যান তারা। এদিকে গুজব প্রতিরোধ করতে মনিটরিং সেল গঠন করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া এই সেল কাজ করবে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। গুজবকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সরকারকে বিপদে ফেলতে না পারে সে কারণেই মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে।
ছেলে ধরা গুজবে সারা দেশে বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এর পেছনে সরকারবিরোধী চক্রান্ত জড়িত। শুরুতে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে না পারলে বড় ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আওয়ামী লীগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনিটরিং সেল নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন দলের যুগ্ম সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা। তারা কেন্দ্র থেকে মনিটরিং সেল দেখাশোনা করবেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করবেন। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা কিংবা রক্ত লাগার কথা যে মিথ্যা ও গুজব তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, গুজব রটিয়ে গণপিটুনির ঘটনা বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা বলেছেন, যারা পদ্মা সেতু চায় না তারাই গুজবের হোতা। এ হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য দলের নেতাকর্মী এবং সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়াও সারা দেশে দলের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করতে বলা হয়েছে জানিয়ে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কিনা, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, এ রকম পরিস্থিতি আর হবে না। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। একই সঙ্গে, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। কিন্তু তারা সফল হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা মানবতায় বিশ্বাস করি, ধর্মান্ধতায় নয়। এখানে ধর্মান্ধতার কোনো জায়গা নেই। ধর্মকে পুঁজি করে যারা জঙ্গিবাদের মতো গুজব সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। গুজব সৃষ্টিকারীরা সফল হবে না।
মন্ত্রী জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর সবগুলোই হত্যাকাণ্ড। যারা এ কাজ করেছে, তারা সবাই হত্যা মামলার আসামি। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। একই সঙ্গে এ ধরণের গুজব যেন না ছড়ায়, সেজন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
মন্ত্রী আরো জানান, ছেলে ধরার যে আতঙ্ক ছাড়ানো হয়েছে, এর কোনো সত্যতা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ গুজব ছড়ানোর কারণে ইতিমধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই কথা বলবে। গুজব প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।