বুধবার , নভেম্বর ৬ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / গানের ভুবনে নজরুল

গানের ভুবনে নজরুল

শেখর কুমার সান্যালঃ

নজরুলের মধ্যে কাব্যপ্রতিভা ও গীতপ্রতিভার শুভ সম্মেলন ঘটেছিল। কবির সৃষ্টিশীল ভাবাবেগ বাণীমূর্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল কাব্যে আর সুরমূর্তি হয়ে অভিব্যক্ত হয়েছিল সংগীতে। বাংলা গান বাণীপ্রধান বলে কবিতা হিসেবেও উৎকৃষ্ট হওয়া দরকার। বাংলা সাহিত্যে কবি হিসেবে নজরুলের রয়েছে একটি বিশিষ্ট স্থান। তিনি উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক ও প্রবন্ধও রচনা করেছে। ফারসি সাহিত্য থেকে তাঁর কিছু উৎকৃষ্ট অনুবাদও রয়েছে। তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নজরুল-প্রতিভার সমাধিক প্রকাশ সংগীতেই।

সংগীতের প্রতি নজরুলের আবাল্য অনুরাগ তাঁর সহজাত। বাল্যে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অর্থোপার্জনের প্রয়োজনে তিনি ‘লেটো’র দলে যোগ দেন। তখন তাঁকে গান রচনা ছাড়াও প্রয়োজনে সুর সংযোজন করতে হতো। তিনি সখের কবিগানের আসরেও যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে পালাগান লিখতেন এবং সেগুলোতে সুরারোপ করতেন। আসরে ঢোলক বাজিয়ে গানও গাইতেন। বারো-তেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি আসানসোলে হুগলী জেলার এম বখ্‌শের রুটির দোকানে কাজ করতেন। সেখানে তাঁর বুদ্ধি ও কাথাবার্তার পাশাপাশি যন্ত্রসংগীতের নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে কাজী রফিজুল্লাহ্‌ নামে এক দারোগা নিজ জেলা ময়মনসিংহের কাজীর-সিমলা গ্রামে নিয়ে গিয়ে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীকালে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে পড়ার সময় নজরুলের এক খ্রিষ্টান বন্ধু ছিলেন শৈলেন্দ্রকুমার ঘোষ। এঁর দিদি হিরণপ্রভা ডাক্তার হয়ে কলকাতায় প্র্যাকটিস করতেন। তাঁর বাড়ির টেবিল-হারমনিয়ামের আকর্ষণে নজরুল প্রায়ই সেখানে যেতেন।

১৯১৭ সালে দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৪৯ নং বাঙালি পল্টনের সৈনিক রূপে লাহোর হয়ে নৌশেরাতে যান। তিন মাস প্রশিক্ষণের পর করাচি সেনানিবাসে শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়। পল্টনে গোপী নামে কলকাতার একজন বাঙালি সৈনিক সম্ভবত বিউগিল বাজাতেন। সংগীতের প্রতি তাঁর আসক্তি ছিল। তিনি নজরুলকে খুব ভালোবাসতেন। নজরুল সৈনিক জীবনের কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও অবসরে করতেন সাহিত্যচর্চা। করাচি থেকে পাঠানো তাঁর লেখা কলকাতার ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’য় প্রকাশের সূত্রে পরিচয় হয় পত্রিকার সব-সময়ের কর্মী মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে ঊনপঞ্চাশ নম্বর বেঙ্গলী রেজিমেন্ট ভেঙে গেলে মুজফ্‌ফর আহমদের পরামর্শে নজরুল কলকাতায় এসে ৩২, কলেজ স্ট্রিটে ‘সাহিত্য সমিতি’র অফিসে তাঁর সাথে আস্তানা গাড়েন।

প্রথম রাতেই নজরুল সবাইকে গান শুনিয়েছিলেন। প্রথম দিকে নজরুল সাধারণত রবীন্দ্রনাথের গানই গাইতেন। ‘আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি’ গানটি তাঁর খুব প্রিয় ছিল। নজরুল রজনীকান্ত ও দ্বিজেন্দ্রলালের গানও গাইতেন। তাঁর কন্ঠ খুব সুরেলা ছিল না, কিন্তু কন্ঠের দরদ ছিল অপূর্ব। এই সময় নজরুল গায়ক হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি খ্যাতি লাভ করতে শুরু করলেন। হিন্দু-মুসলিম মেসগুলি ছাড়াও হিন্দু পরিবার থেকেও নজরুলের আমন্ত্রণ আসতে থাকে। কলকাতায় রবীন্দ্র-সংগীতের গায়ক হিসেবে হরিদাস চট্টোপাধ্যায়ের খুম নাম ছিল। নানান জায়গায় গান গাওয়ার ভিতর দিয়ে হরিদাসবাবুর সাথে নজরুলের পরিচয় হয়। এর পর থেকে দু’জনে একসাথে অনেক জায়গায় গান গেয়েছেন।

সে সময় মোহিনী সেনগুপ্তা নামে এক ব্রাহ্ম মহিলার তৈরি করা গানের স্বরলিপি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। তিনি ইতিমধ্যে নজরুলের দুই একটি কবিতায় সুর আরোপ করেন। একটি পত্রে তিনি নজরুলকে অনুরোধ জানান সংগীতের নিয়মকানুন মেনে গান রচনা করতে। তিনি বলেন গানে অস্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ এই চারটি বিভাগ থাকা প্রয়োজন। কাব্যের ক্ষেত্রে নজরুল-মানসের প্রাণশক্তির প্রাবল্য অনেক সময় আঙ্গিকের বাঁধন মানতে চায় নি। ছন্দ ও শব্দ ব্যবহারে তাঁর অসংযম বহুক্ষেত্রে কাব্যের রসসৃষ্টিকে ব্যাহত করেছে। অথচ তাঁর রোমান্টিক ভাবতরঙ্গ স্বাভাবিক ছন্দে লীলায়িত হয়ে সার্থক সংগীত রচনার সহায়ক হয়ে উঠেছিল। তাঁর ভাবাবেগ আশ্চর্যভাবে সংহত হয়ে তাঁর গানে গভীরতা এনেছে। নিজের রচিত সুর দেওয়া প্রথম যে গান নজরুল বন্ধুদের শুনিয়েছিলেন সেটি ‘ওরে আমার পলাতকা’। তারপর একদিন নজরুলের গানে গানে দেশ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল। নিজে বিশিষ্ট সুরজ্ঞ ছিলেন। নব নব সুরের মাধুর্য ও মূর্চ্ছনায় তাঁর গানে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। নজরুলের শ্রেষ্ঠ গানগুলোর যেমন বাণীসম্পদ তেমনি সুরৈশ্বর্য্য।

ভাব অনুসারে নজরুলগীতিকে পাঁচটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে – (১) দেশাত্মবোধক, (২) প্রেমগীতি, (৩) ভক্তিগীতি, (৪) প্রকৃতিগীতি ও (৫) রঙ্গগীতি।

(১) দেশাত্মবোধক গান

নজরুলের গানে দেশপ্রেমের উন্মাদনা, পরাধীনতার জ্বালা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা যে ভাবে ব্যক্ত হয়েছে তার কোন তুলনা হয় না। তাঁর কোরাসগান যৌথসংগীতের ক্ষেত্রে এক বিশেষ দিক খুলে দিয়েছে। নজরুলের সর্বাধিক প্রচলিত কোরাসগান ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার’, ‘শিকল-পড়া ছল মোদের শিকল-পড়া ছল’, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ যৌথসংগীতের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ১৯২৯ সালের পনেরোই ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে নজরুল-সম্বর্ধনা সভায় বলেছিলেন “আমরা যখন যুদ্ধে যাব – তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তাঁর গান গাইব। আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে বেড়াই। বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় জাতীয় সংগীত শুনবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’র মতো প্রাণমাতান গান কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না’। কোরাসগানের বিশেষ ধারা মার্চ-সংগীতে নজরুল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ বাংলাদেশের সমরসংগীত। ‘অগ্রপথিক হে সেনাদল’, ‘টলমল টলমল পদভরে’, ‘আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল’। ইত্যাদি মার্চ-সংগীত হিসেবে অনবদ্য। নজরুলের জাগরণী গান ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’, ‘জাগো অনশন-বন্দী, উঠরে যত, জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত’ অসাধারণ সৃষ্টি। নজরুল বাংলা মায়ের রূপ অপূর্ব আন্তরিকতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম চির-মনোহর চির-মধুর’ গানটিতে দেশভক্তি উচ্ছল হয়ে উঠেছে। নিচের গানটির তো কোন তুলনাই নেই –

‘আমার শ্যামলা বরন বাংলা মায়ের
রূপ দেখে যা আয় রে আয়।
গিরি-দরি-বনে-মাঠে-প্রান্তরে রূপ ছাপিয়ে যায়।।’

নজরুলের বাউল-অঙ্গের একটি গান একই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় –

‘আমার দেশের মাটি
ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি।।
এই দেশেরই মাটি জলে
এই দেশেরই ফুলে ফলে
তৃষ্ণা মিটাই, মিটাই ক্ষুধা
পিয়ে এরি দুধের বাটি।।’

হিন্দু-মুসলমান মৈত্রী বিষয়ক নিচের গানটিতে নজরুলের অসাম্প্রদায়িক দেশাত্মবোধের অকুন্ঠ প্রতিফলন হয়েছে –

‘মোরা একবৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।
মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।’

(২) প্রেমগীতি

প্রেম-বিরহবেদনার অভিব্যক্তি সার্থক ভাবে ফুটেছে নজরুলের প্রেমগীতিতে। ‘মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর নমো নম, নমো নম, নমো নম’, ‘গানগুলি মোর আহত পাখির সম’, ‘ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি’, ‘আমারে দেব না ভুলিতে’, ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর, ফিরে আয় ফিরে আয়’ বাণী ও সুরসম্পদে অনবদ্য। বাংলা গজলে নজরুল তুলনাহীন। গজল পারস্য দেশের এক রকম লঘু প্রেমসংগীত। এর শুধু অস্থায়ী অংশটুকু ছন্দে গাওয়া নিয়ম। ‘শায়র’ নামের অবশিষ্ট অংশগুলি আবৃত্তির ঢঙে গাওয়া হয়। নজরুলের জনপ্রিয় গজলগুলোর মধ্যে ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল’, ‘এত জল ও-কাজল চোখে পাষাণী, আন্‌ল বল কে, ‘আমার চোখ ইশারায় ডাক দিলে হায় কে গো দরদী’, ‘বসিয়া বিজনে কেন একা মনে’, ইত্যাদি অনবদ্য বাংলা গজল। দিলীপকুমার রায়, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া, শচীন দেববর্মন ও কৃষ্ণচন্দ্র দে নজরুলের প্রেমসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

(৩) ভক্তিগীতি

নজরুলের ভক্তিগীতির মধ্যে রয়েছে শ্যামাসংগীত, কীর্তন ও ভজন এবং ইসলামী সংগীত। রামপ্রসাদের পর শ্যামাসংগীতে নজরুলই শ্রেষ্ঠ। ‘আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন’, ‘বল রে জবা বল, কোন সাধনায় পেলি রে তুই শ্যামা মায়ের চরণতল’, প্রভৃতি গানে ভক্তহৃদয়ের আকুলতা উদ্বেলিত হয়েছে। বৈষ্ণব সংগীত ‘আমি কি সুখে লো গৃহে রব, আমার শ্যাম যদি ওগো যোগী হল সখি আমিও যোগিনী হব’, ‘আমি কেন হেরিলাম নবঘনশ্যাম কালারে কালো কালিন্দী কূলে’ এবং ভজন ‘কোন কুসুমে তোমায় আমি পূজিব নাথ বল বল’, ‘ব্রজগোপী খেলে হোরি’, ইত্যাদি গানগুলো ভক্তিগীতি হিসেবে অতুলনীয়। আব্বাসউদ্দীনের অনুরোধে নজরুল ইসলামী সংগীত রচনা শুরু করেন। প্রথম দু’টি গান ‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ ও ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর’ আব্বাসউদ্দীন রেকর্ড করেন ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েসে’। এটি বাংলায় ইসলামী গানের প্রথম রেকর্ড। এরপর নজরুল হামদ, নাত, মার্সিয়া, হজ-জাকাত, নামাজ-রোজা, ঈদ, হজরতের আবির্ভাব ও তিরোভাব প্রভৃতি বিষয়ে হৃদয়ে দোলাজাগানীয়া অফুরন্ত ইসলামী গান রচনা করেন। এগুলোর পঁচানব্বই শতাংশের সুর তিনি নিজেই করেন। সামান্য কয়েকটির সুর করেন কমল দাশগুপ্ত ও চিত্ত রায়। আব্বাসউদ্দীন ছাড়াও এসব গান রেকর্ড করে অপ্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ধীরেন দাস গণি মিয়া নামে, চিত্ত রায় দেলোয়ার হোসেন নামে, গিরীন চক্রবর্তী সোনা মিয়া নামে, আশ্চর্যময়ী সাকিনা বেগম নামে এবং হরিমতী আমিনা বেগম নামে। ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়’, ‘বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল’, ‘বাজিছে দামামা বাঁধিবে আমামা শির উঁচু করি মুসলমান’, প্রভৃতি গান একসময়ের সংগীত-বিরোধী মুসলমান সমাজকে মাতিয়েছিল।

(৪) প্রকৃতিগীতি

প্রকৃতি পর্যায়ের কয়েকটি গানে নজরুলের প্রকৃতিপ্রেম সার্থক ভাবে রূপায়িত হয়েছে। ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি সুরেও নজরুল গান লিখেছেন। ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’, ‘আজি দোল ফাগুনের দোল্‌ লেগেছে’, ‘মেঘ মেদুর বরষায় কোথায় তুমি’, ‘শাওন রাতে যদি’, ‘শাওন আসিল ফিরে সে তো ফিরে এলো না’, ‘আসে বসন্ত ফুলবনে, মধূপ উঠিছে গুঞ্জরি’, ‘নদীর নাম সই অঞ্জনা, নাচে তীরে খঞ্জনা’, ‘পদ্মার ঢেউ রে’, প্রভৃতি প্রকৃতিগীতি সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

(৫) রঙ্গগীতি

রঙ্গগীতিতে নজরুলের জুড়ি নেই। হাসির গানগুলিতে দু’টি ধারা লক্ষ্য করা যায় – রাজনৈতিক-সামাজিক চেতনাসম্পন্ন তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক গান এবং প্রেম ও ধর্ম সম্বন্ধীয় লঘুরসের রঙ্গপ্রধান গান। ‘বদনা-গাঢ়ুতে গলাগলি করে নব প্যাক্টের আসনাই, মুসলমানের হাতে নাই ছুরি, হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই’, ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’, ‘উলটে গেল বিধির বিধি আচার বিচার ধর্ম জাতি, মেয়েরা সব লড়ুই করে মদ্দ করেন চড়ুইভাতি’, প্রভৃতি প্রথম ধারার উৎকৃষ্ট রঙ্গগীতি। ‘আমার হরিনামে রুচি, কারণ পরিণামে লুচি’, ‘আমি ভোজনের লাগি করি ভজন’, ‘ছিটাইয়া ঝাল-নুন এল ফাল্গুন মাস। কাঁচা বুকে ধরে ঘুণ, শ্বাস উঠে ফোঁস ফাঁস’ প্রভৃতি দ্বিতীয় ধারার ব্যাঙ্গগীতি।

উপসংহার

নজরুলসংগীতের সুরবৈচিত্র্যের সম্যক আলোচনা সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। রাগসংগীত ও লোকসঙ্গীত উভয় সুরকে আশ্রয় করেই তিনি গানে অভিনবত্ব আনতে সক্ষম হয়েছেন। বিদেশী সুরকে আশ্রয় করেও তিনি সংগীত রচনা করেছেন। আরবি সুরে ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায়’, কিউবান নৃত্যের সুরে ‘দূরদ্বীপবাসিনী, চিনি তোমারে চিনি’, মিসরীয় সুরে ‘আসে বসন্ত ফুলবনে, মধূপ উঠিছে গুঞ্জরী’, ‘মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে নেচে যায়’ গানগুলি বাংলা গানের সুরসম্পদ বৃদ্ধি করেছে। নজরুল প্রচলিত রাগ-রাগিনী ছাড়াও লুপ্ত বা অর্ধলুপ্ত রাগ-রাগিনী উদ্ধার করে সেই সব সুরে সংগীত রচনা করেছেন। রাগ-রাগিনীর মিশ্রণে ও ভাঙাগড়ায় নজরুল অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। দেশী ও বিদেশী সুরের মিশ্রণও ঘটিয়েছেন তাঁর গানে।

নজরুল-সংগীত বাঙালির বিপুল জাতীয় সম্পদ।

আরও দেখুন

অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়

নজরুল ইসলাম তোফা: আমরা জীবনে চলার পথে বহু মানুষকে “ভালোবাসা” দিয়ে দিয়ে থাকি। হয়তো আমরা …