মুনিয়া মানসপ্রতিমা
সুন্দরীশ্রেষ্ঠা
পর্ব-০১
আমার বয়স তখন কতই বা আট কি নয়। গ্রামের সোদা মাটির গন্ধ গায়ে মেখে বড় হচ্ছি। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। আঁইল ধরে হাটা। হাঁটু জল,কোমর জল,কাঁদা মাটিতে মাখামাখি। হৈচৈ, কানামাছি, ফুটবল, হাডুডু, মার্বেল, লুডু সব খেলাতে পটু। উঠতে বসতে চলাফেরায়, খেলাধুলার মাঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছিল সহজাত স্বভাব। জেদি স্বভাবের কারণে মারামারি টা বেশি করতাম। কেউ কারো সমালোচনা করলে সহ্য হতোনা। ফোঁস করে উঠে দু’চারঘা লাগিয়ে দিলে ক্রোধ ঠান্ডা। গতরে শক্তি ছিল কম সাহস ছিল বেশি। পরক্ষণে ভাবতাম যাকে মারলাম সে যদি হাত চালাতো তবে আমার রক্ষা হতো না। হিসেব কষে ও ফলাফল শূন্য। রক্তে প্রবাহিত জেদি স্বভাব সময়মতো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতো। বর্ষাকালীন সময়ে জমিনে নেমে খেলাধুলা করা ছিল দুঃসাধ্য। চতুর্দিকে অথৈজল। মেঠো পথ অথবা কাচারির উঠান ছিল একমাত্র সম্বল। ব্যাস্ততম রাস্তায় খুববেশি খেলাধুলা করা সম্ভব হতো না। অপরদিকে কাচারির উঠানে খেলতে গেলে গুরুজনের বাঁধা। সমান ভাগে ভাগ করে খেলতে খেলতে বেলা কেটে যেতো। টানা বৃষ্টি থেমে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশ আবার কখনও কখনও মেঘলা আকাশ। সূর্যি মামা লুকোচুরি খেলছে। রোদের তাপে কর্দমাক্ত পথ ঘাট হাল্কা শুকিয়েছে। যে যার মতো করে ঘর ছেড়ে বের হতো। কাপড়চোপড় শুকানোর জন্য মা চাচিদের সে কি চেষ্টা। অতি বৃষ্টির ফলে বৃক্ষ অরণ্য ন্যূয়ে যেতো। বাগিচার গাছপালা ঠিক করার মহাযজ্ঞ। সূর্যের দেখা মিললে পড়ন্ত বিকেলে সব বয়সী ছেলে মেয়ে খেলাধুলার জন্য ঘর ছেড়ে বের হতো। চারদিকে কলরব কোলাহল। মেঘ ঘুরঘুর বৃষ্টি এলে হুলস্থূল দৌড়। আহ্ সে কি আনন্দ! এখনও চোখে লেগে আছে সেদিনের সেই বিকেল গুলো। বাদলা দিনের কোন এক ক্ষণে কাচারির উঠোনে নজরে পড়ে ছোট্ট একটা মেয়ে। আপন মনে খেলছে। গুটি গুটি পায়ে পায়চারী করছে। চোখ পড়তে বুকের ভেতর মোচড়। কারণ অজানা। মূহুর্তে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। নিজেকে প্রশ্ন করলাম হঠাৎ কেন এমন? উত্তর মেলেনি ঠিকই কিন্তু দেখার আগ্রহ ক্রমান্বয়ে প্রবল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা। সে আর আসে না। অসময়ে একদিন পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আচমকা খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পাই। সবার অলক্ষ্যে বাগবাগিচার ঝোপঝাড়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। হ্যাঁ এইতো সেই। যাকে দেখার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করি।
চলবে…