নিউজ ডেস্কঃ
ক্যানসার, ম্যালেরিয়া ও পার্কিনসন’স ডিজিজের গন্ধ ধরে ফেলার পরীক্ষায় ইতোমধ্যেই সফল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর। তাই এবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রবল ঘ্রাণশক্তির এই প্রাণীকে বাজিয়ে দেখতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিভাগ।
কুকুরের ঘ্রাণশক্তির উপকার মানুষ বহুকাল ধরেই পাচ্ছে। গন্ধ শুঁকেই কুকুর আসামি ধরে ফেলে, এ তো পুরনো ও বহুল প্রচলিত ঘটনা। দুনিয়ার অনেক দেশেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে এমন কুকুরের অনেক কদর। বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া ও বিশেষ যত্ন নেওয়া হয় সেগুলোর। তাই বলে মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারবে?
এমন চেষ্টাই করে দেখছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে বাজিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তারা।
নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার, ম্যালেরিয়া ও পার্কিনসন’স ডিজিজের গন্ধ ধরে ফেলার প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যেই নিয়েছে ‘মেডিকেল ডিটেকশন ডগস’ দাতব্য সংস্থার কুকুরগুলো।
এই দাতব্য সংস্থা ও ডারহাম ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে শুরু হবে গন্ধ শুঁকে কোভিড-১৯ শনাক্ত করার প্রথম প্রচেষ্টা। এই প্রকল্পে ৫ লাখ পাউন্ড অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। খবর বিবিসির।
দেশটির ইনোভেশন মিনিস্টার লর্ড বেথেল আশা করছেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, এই কুকুরগুলো যে কাজে বেশ দ্রুত ফল এনে দিতে পারবে।
উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এই ‘কোভিড ডগ’ বা ‘করোনা কুকুর’গুলো শনাক্ত করতে পারে কি না, সেটিই পরীক্ষা শিগগিরই করে দেখা হবে।
এই কুকুরগুলোর একেকটির পক্ষে ঘণ্টায় আড়াই’শ মানুষকে পরীক্ষা করা সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রচেষ্টাটি সফল হলে অদূর ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বাহকের জন্য পরিণাম মারাত্মকে পৌঁছানোর আগেই শনাক্ত করা যাবে। তার ফলে আক্রান্তকে চিকিৎসা দিতে সুবিধা হবে এবং প্রাণহানির আশঙ্কা কমে আসবে।
কুকুরের ঘ্রাণশক্তি পরখ করে নেওয়ার প্রথম পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (এনএইচএস) কর্মীরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের পাশাপাশি অনাক্রান্তদের নমুনাও সংগ্রহ করছেন।
প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষা দেওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছয়টি কুকুরের নাম নরম্যান, ডিগবাই, স্টর্ম, স্টার, জ্যাসপার ও অ্যাশার। ওরা সফল হলে ‘করোনা কুকুর’ দলে আরও সদস্য বাড়ানো হবে। ছবি: ডিএইচএসসি
কুকুরগুলোকে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে দাতব্য সংস্থা ‘মেডিকেল ডিটেকশন ডগস’।
তিন মাসের প্রাথমিক পরীক্ষা পর্ব শেষে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, ওরা আসলেই কাজের কি না।
পরীক্ষায় সফল হলে দেশের প্রবেশমুখগুলো, বিশেষত বিমানবন্দরে ‘করোনা কুকুর’ কাজে লাগানো হবে, যেন কোনো যাত্রীর শরীরে কোভিড-১৯ রয়েছে কি না, তা সহজেই নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়া ভাইরাসের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও এই কুকুরগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।
কুকুরের ঘ্রাণশক্তির পক্ষে কোনো ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব কি না, এ নিয়ে ১০ বছরেরও বেশিকাল ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছে ‘মেডিকেল ডিটেকশন ডগ’।
এই দাতব্য সংস্থার যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. ক্লেয়ার গেস্ট বলেন, ‘আমাদের কুকুরগুলো কোভিড-১৯-এর ঘ্রাণ ধরতে পারবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
তিনি আরও জানান, যদি প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা এই কুকুরগুলো ভালোভাবে উৎরে যেতে পারে, তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে সরাসরি এগুলোকে ব্যবহার করা হবে কোভিড-১৯ শনাক্তের কাজে। পাশাপাশি, শুরু করা হবে আরও কিছু কুকুরের প্রশিক্ষণ।
এর আগে গাম্বিয়ায় গন্ধ শুঁকে ম্যালেরিয়া জীবাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর। সে দেশের আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ, শরীরে কোনো উপসর্গ নেই- এমন শিশুদের মোজা শুঁকে কুকুরগুলো ধরে ফেলেছিল, ওই শিশুরা ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত। পরে, ম্যালেরিয়ার প্রচলিত পরীক্ষায় সেগুলো পজিটিভ এসেছিল।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক জেমস লোগ্যান বলেন, ‘আমাদের আগের পরীক্ষাটি সফলভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে, কুকুরের ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব।’
এছাড়া মানবদেহে ক্যানসার ও পার্কিনসন’স ডিজিজ শনাক্ত করতেও পুরোদস্তুর সফল হয়েছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর।
সেই ভরসায় কোভিড-১৯ শনাক্তেও সফল হওয়ার আশা করছেন অধ্যাপক জেমস লোগ্যান।