রবিবার , সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / গতি আনার চেষ্টা বড় প্রকল্পে

গতি আনার চেষ্টা বড় প্রকল্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছুটিতে গিয়ে আটকে পড়া বিদেশি কর্মী টেকনিশিয়ান প্রকৌশলীদের বিশেষ ব্যবস্থায় কাজে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান ঠিক রাখতে এনবিআরের রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা, করোনার ঝুঁকি এড়াতে কর্মীদের প্রকল্প এলাকার বাইরে যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, মার্চ-জুনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিফটিং পদ্ধতিতে অবিরাম ২৪ ঘণ্টা কাজ

করোনাভাইরাস মহামারীর অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক গতি ফিরছে অর্থনীতিতে। একইভাবে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত মার্র্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া প্রকল্পের কাজ পুুষিয়ে নিতে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী উন্নয়নমূলক বড় প্রকল্পে যাতে অর্থের কোনো সংকট না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান ঠিক রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে রাজস্ব বাড়াতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিফটিং পদ্ধতিতে অবিরাম ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ প্রায় সব বৃহৎ প্রকল্পে। এসব প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের মনিটরিংও জোরদার করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মীদের প্রকল্প এলাকার বাইরে যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ছুটিতে যাওয়া বিদেশি শ্রমিক, টেকনিশিয়ান, প্রকৌশলীসহ প্রায় সবাই আবার কাজে ফিরে এসেছেন বিশেষ ব্যবস্থায়। সব ধরনের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সকল প্রকার যানবাহন কেনা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজের গতি যেন না কমে সেদিকে তীক্ষè দৃৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাবউদ্দিন তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ে কীভাবে কাজটা শেষ করা যায়। একই সঙ্গে মার্চ-জুনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও অবিরাম কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। করোনার ঝুঁকি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।’ ইতিমধ্যে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে স্বাভাবিক গতি ফিরেছে। এ প্রকল্পের সব স্প্যান বসানো সম্পন্ন করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গত নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৮২ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে ২০২২ সালের জুনের আগেই এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে রেললিঙ্ক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৮ শতাংশ। একইভাবে চলছে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজও। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের প্রথম অংশ দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সম্পন্ন হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও এগিয়ে চলছে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজেও গতি ফিরেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। গত মার্চে খুলে দেওয়া হয়েছে ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়েটির মূল অংশ। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশ তেঘরিয়া থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ অংশের আড়াই কিলোমিটারই এলিভেটেড এবং বাকি অংশ সমতলভূমিতে নির্মিত। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ, ঝিলমিলবাসীও এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবেন তেঘরিয়া থেকে। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজেও গতি ফিরেছে। যদিও এ প্রকল্পের কাজের সময়সীমা কিছুটা দীর্ঘায়িত হবে। আগে পরিকল্পনা ছিল একই দিনে যান ও রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। এখনো বলা হচ্ছে, সেতুর ওপর নির্মিত রেললাইনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে। তবে দুই পাশের সংযোগ লাইনের কাজে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিরাট অগ্রগতি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ। আশা করা যায় আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করতে পারব।’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের কাজেও স্বাভাবিক গতি ফিরেছে। করোনা মহামারী লকডাউনকালে যেসব শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান নিজ দেশে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন তার অধিকাংশই ফিরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ যে আর্থসামাজিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তার একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে এ টার্মিনাল। বিমানবন্দরে নেমেই বিদেশি বিনিয়োগকারী, পর্যটকসহ বিদেশ থেকে আগতদের মধ্যে সৃষ্টি করবে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব। সূত্র জানান, নির্মাণাধীন এ তৃতীয় টার্মিনালটির সংযোগসড়ক সুড়ঙ্গ পথে সরাসরি যুক্ত হবে মেট্রোরেল লাইন-১-এর সঙ্গে। মেট্রোরেল লাইন-১ মূলত এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরঝিল, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুরে শেষ হবে। ফলে এয়ারপোর্টে নেমেই মেট্রো ধরে যাত্রীরা সরসারি রেলস্টেশনে যেতে পারবেন। শুধু তাই নয়, থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত প্রস্তাবিত সাবওয়ে ও নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ টার্মিনালটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আসছে জাপানি কোম্পানি। ইতিমধ্যে জাপানের একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এ টার্মিনালটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে চায় সরকার। আশা করা হচ্ছে, জাপানি কোম্পানি খুব শিগগিরই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। অবশ্য টার্মিনালটি নির্মাণের কাজেও নিয়োজিত রয়েছে জাপানি কোম্পানি।

সূত্র জানান, ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, প্রবেশ ও নির্গমন, মহাসড়কের যানজট নিরসন এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- পাঁচটি মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্প, দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প, তিন স্তরবিশিষ্ট লিঙ্ক রোড, আটটি রেডিয়াল সড়ক, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে ও ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব নির্মাণ। এ ছাড়া যাতায়াতব্যবস্থা সহজ ও সুলভ করতে মেট্রোরেলের লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যমুনা নদীর ওপর নির্মাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু। গত মাসের শেষের দিকে এ সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়েই এর কাজ শেষ হবে। ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে এ সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি নির্মাণ করবে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এটি অবশ্য গত মার্চের সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয়, যা প্রথম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সূত্র জানান, এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে রেললাইন তুলে নেওয়া হবে। নতুন সেতুতে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল আরও সহজ হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, নবীনগর ডিইপিজেড-চন্দ্রা-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মিরপুর ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল, হানিফ ফ্লাইওভার, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। চলমান এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়কপথে চাপ কমবে। এর মাধ্যমে যেমন যানজট কমবে, তেমনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণে জ্বালানি ও সময়- উভয়ই সাশ্রয় হবে। কমে আসবে পণ্য পরিবহন ব্যয়। বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড রেল স্থাপন প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগিয়েছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের কাজও। এ প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর কাজও চলছে কাক্সিক্ষত গতিতে। অর্থায়নে তেমন কোনো সংকট না থাকলেও সামগ্রিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজই থেমে গিয়েছিল গত মার্চ-জুন সময়ে। বর্তমানে এসব প্রকল্পের কাজে স্বাভাবিক গতি ফিরেছে।

আরও দেখুন

নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘুদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ, নির্যাতন চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদে ও ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে …