- মাত্র দুইশ’ কর্মকর্তা নিয়ে সিভিল প্রশাসনের যাত্রা শুরু
- দেড় লক্ষাধিক জনবল তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন সরকারের সকল সেবা
- প্রশাসনকে তছনছ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় জিয়া-এরশাদ
মাত্র দুইশ’ কর্মকর্তাকে নিয়ে শুরু করা সিভিল প্রশাসন এখন শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে। ৫০ বছরে গড়ে ওঠা প্রশাসনের দেড় লক্ষাধিক জনবল তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে সরকারের সকল সেবা। ’৭৫’র পর নানা চড়াইউতরাই পেরিয়ে এখন জবাবদিহিমূলক, শক্তিশালী, গণমুখী রূপ নিয়েছে প্রশাসন।
শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি দক্ষ প্রশাসন গড়ার উদ্যোগ নেন। তখন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধীরা সিভিল প্রশাসনে অনুপ্রবেশ শুরু করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর তারা খোলস থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসন যন্ত্রকে ধ্বংস করে পাকিস্তানপ্রেমী প্রশাসন গড়তে উদ্যোগী হয়। জিয়া-এরশাদ বঙ্গবন্ধুর সাজানো প্রশাসনকে তছনছ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। বিশেষ সুবিধা নেয়ার লক্ষ্যে ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে মেধাশূন্য করে ফেলে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা কর্মপরিকল্পনা, শুদ্ধাচার, সিটিজেন চার্টার, তথ্য অধিকার আইন ইত্যাদির মাধ্যমে গণমুখী প্রশাসন গড়ে তুলেছে। যার সুফল দেশবাসী পেতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে গড়া আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তাদের দ্বারা চলতে থাকে উপমহাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের অবসানের পর ভারত বিভক্ত হয়। দেশভাগের পর এর নাম হয় সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান জুড়ে কমবেশি পাঁচশ’ সিএসপি কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় দুইশ’ কর্মকর্তা ছিলেন বাঙালী। দেশ স্বাধীনের পর এই দুইশ’ কর্মকর্তাই ছিলেন সিভিল সার্ভিসে। পাকিস্তান আমলে সিএসপি কর্মকর্তারা নিয়োগ পেতেন সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসের (সিএসএস) মাধ্যমে। এর বাইরে প্রাদেশিক পর্যায়ে দু’টি সার্ভিস ছিল ইপিসিএস (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) এবং ডাব্লিউপিসিএস (পশ্চিম পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস)। বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জন্য ইপিসিএস কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে নিয়োগ পেতেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি থাকতেন জুডিসিয়াল, পুলিশ, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তারা। এই সব কর্মকর্তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ তৎকালীন সিও (সার্কেল অফিসার) রেভিনিউ, সিও ডেভেলপমেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেতেন। আর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতেন এবং চাকরির বিধিমোতাবেক এক দুই ধাপ পদোন্নতি পেয়ে তারা অবসরে যেতেন। পাশাপাশি সিএসপি কর্মকর্তারা সরাসরি এসডিও (সাব ডিভিশনাল অফিসার) হিসেবে নিয়োগ পেতেন এবং পদোন্নতি পেয়ে ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব বা ততোর্ধ হতেন।
সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে এই সকল প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রতিষ্ঠা করে সকলকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসেন। সেই অনুসারে ১৯৭৩ সালে বিসিএস-এর প্রথম ব্যাচ নিয়োগ দেয়া হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশে তখন ভাল মেধাবী কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি বলে প্রচার আছে। তারপরও দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এর থেকে বেছে ভাল কর্মকর্তাদের প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আর মেধা তালিকায় পেছনের সারিতে থাকা কর্মকর্তাদের ব্যাংক, সেক্টর কর্পোরেশন, বীমা, শিল্প-কারখানায় (আদমজী, ইস্পাহানী ইত্যাদি) নিয়োগ দেয়া হয়। তখন ইপিসিএস-এর দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা এবং সিএসপির সমান হয়ে তাদের সঙ্গে একই মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলা হয়।
এদিকে বাঙালী প্রায় দুইশ’ সিএসপি কর্মকর্তার মধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তা ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী। বঙ্গবন্ধু এই সার্ভিসকে বিসিএস নামকরণের পর স্বাধীনতা বিরোধী এই সকল সিএসপি কর্মকর্তা স্বাধীনতা সংগ্রামী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে মিশে স্বাধীনতার সপক্ষ বনে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকা-ের পরপরই সিএসপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকর্তারা নিজরূপ ধারণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে ফেলেন। শুরু হয় প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করা, যা আজও চলমান। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও তারা নানা কৌশলে সরকারের আস্থাভাজন বনে গিয়ে স্বাধীনতার সপক্ষের কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে আসছেন।
এইচটি ইমাম ছিলেন মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর আমলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। আর খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন মুজিবনগর সরকার ও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে অর্থ সচিব। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে শপথ পাঠ করান তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম। শপথ পাঠ করানোর পর এইচটি ইমাম, খন্দকার আসাদুজ্জামানসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বেশ কয়েকজন সিএসপি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং আটক করা হয়।
স্বাধীনতার আগে প্রাদেশিক চীফ সেক্রেটারি ছিলেন সফিউল আজম। তৎকালীন এই পদটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সেক্রেটারি পদের সমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই পদটি অবলুপ্ত করেন। অবলুপ্ত হওয়ার পর সফিউল আজমের চাকরি শেষ হয়ে যায়। এইচটি ইমামকে আটকের পর পাকিস্তানপন্থী কুখ্যাত এই কর্মকর্তা সফিউল আজমকে ফিরিয়ে এনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করে মোস্তাক সরকার। পরে জিয়া-মোস্তাকরা একের পর এক বিতর্কিত এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকর্তাদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব করেন। ওই যুগের অবসানের পর ধারার কিছুটা পরিবর্তন আসে। বিগত ৫০ বছরে বর্তমানে দেশে ২২তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব কর্মরত রয়েছেন। এই সকল বিতর্কিত কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে বসানোর ফলে তারা দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যান। তখন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
অনেক সংগ্রামের পর এইচটি ইমাম, খন্দকার আসাদুজ্জামানসহ চাকরিচ্যুতরা পুনর্বহাল হন। তবে এইচটি ইমাম, আসাদুজ্জামানকে পদাবনতি করা হয়। তাদের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। এইচটি ইমামকে পিআইও (প্রজেক্ট ইম্পিøমেন্টেশন অফিস)-এর প্রকল্প পরিচালক এবং আসাদুজ্জামানকে সংস্থাপনের ওএ্যান্ডএম এর অতিরিক্ত সচিব করা হয়। পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকর্তাদের সামনের দিকে এনে ভাল পদে পদায়ন করা হয়।
সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ’৭৭, ’৭৯, ’৮১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে হিজবুল বাহারে (হাজীদের হজে নেয়ার জন্য কেনা জাহাজ) ভ্রমণকারী কর্মকর্তারা (মুক্তিযুদ্ধ পরিপন্থী) এই সকল ব্যাচে ঢুকে পড়েন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু দেশের ১৯ জেলায় গবর্নর নিয়োগ দেন। দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি ডিসিদের ওপরে তাদের বসানোর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরীকে দিয়ে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। দেশের সকল মহকুমায় একজন করে গবর্নর নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা যোগদানের আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর এই ধারণাকে ধারণ করে এরশাদ আমলে দেশের মহকুমাকে জেলা করা হয় এবং থানার নাম দেয়া হয় মান উন্নয়ন থানা। পরে থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। তখন উপজেলা এবং নতুন জেলায় কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তৎকালীন পিএসসির চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ এবং সংস্থাপন সচিব সামসুল হক চিশ্তী পরামর্শ করে ২০০ নম্বরের টিক মার্ক পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। এতে নিজের লোককে চাকরি দিতে বয়স পরিমার্জন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তখন নিয়োগের সময় বয়স বেশি হলে তাদের বেশি বেতন দিয়ে চাকরিতে নেয়া হয় বলে জানা যায়। উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ৬৫০ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। শর্ত থাকে তারা চাকরি জীবনে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত থাকবেন। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের কাছ থেকে তারা পদোন্নতি নিয়ে এক সময় দেশ পরিচালনা করেন।
কর্মকর্তার স্বল্পতা বলে ১৯৮২ সালে প্রায় দুইশ’ কর্মকর্তাকে এবং ১৯৮৩ সালে আরও ৬৫০ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা প্রশাসনে ঢুকে পড়েন। এর পরে আরও কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ’৮১, ’৮২ সালের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় নিচের দিকে থাকা লোকদের (তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজনদের) মধ্য থেকে ৭৭ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়, যা প্রশাসনে গ্রুপ ৭৭ নামে পরিচিতি পায়। ’৮৪ ব্যাচে ৪৫০ এবং ’৮৫ ব্যাচে আরও ৫৫০ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বল্প ব্যবধানে তিন ব্যাচে ১৬৫০ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে প্রশাসন অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে। নিয়োগ পদোন্নতিতে সর্বক্ষেত্রে জটিলতা শুরু হয়। এতে কর্মকর্তারা বিভিন্ন লবিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে কম মেধাবীরা প্রশাসনে ঢুকতে থাকেন এবং দেশে দুর্নীতি শুরু হয়। এরশাদের আমলে প্রশাসনসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে। এ সময় দ্বিতীয় শ্রেণীর ইপিসিএস কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হন। জিয়াউর রহমান তার আস্থাভাজন প্রতিরক্ষা বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে পুলিশ বাহিনী ও সচিবালয়ের উর্ধতন পদে নিয়োগ দেন। এতে পুলিশ, গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন বাহিনীতে অস্থিরতা শুরু হয়। পুলিশ বাহিনীতে পদোন্নতি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এতে তাদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। এরশাদের আমলেও এর ধারাবাহিকতা চলতে থকে। সচিবালয়সহ প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যেও অস্থিরতা শুরু হয়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা সিভিল সার্ভিসকে ভেঙ্গে তছনছ করতে থাকে। স্বাধীনতাপন্থী কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে রাখা, পদাবনতি করা, তাদের সরকারী চাকরিতে প্রবেশের পথ সঙ্কুচিত করা এবং প্রশাসনকে পাকিস্তানী আদর্শে দীক্ষিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রশাসনকে দক্ষ ও গণমুখী করার উদ্যোগ নেয় সরকার। ১৯৯৬ সালের কার্যবিধিতে (রুলস অব বিজনেস) সুনির্দিষ্ট সরকারী কার্য সম্পাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সরকার কর্তৃক ঘোষিত কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিটকে বিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বিভাগ বা কতিপয় বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমি প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় রয়েছে ৩৯টি। বড় মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ থাকে। যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলোও মন্ত্রণালয় বটে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারের কার্যাবলী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সরকারী কার্যবণ্টনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওপর ন্যস্ত। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারী প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯ সালে সরকার তথ্য অধিকার আইন পাস করে। দেশের জনগণকে ক্ষমতাশালী ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার এই আইন পাস করে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সিটিজেন চার্টার, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ, প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে জাতীয় শুদ্ধাচার নীতি প্রণয়ন, দেশের মানুষের জন্য কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি, মাঠ প্রশাসনকে শক্তিশালী করা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ, কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশাসন এখন গণমুখী রূপ নিয়েছে। এছাড়া সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজড করা, অনলাইনের বিভিন্ন সুযোগ বৃদ্ধি করে বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে।
২০১৩-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকার চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৯ জন। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৯১১, দ্বিতীয় শ্রেণীর ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৯ হাজার ৬০৩ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ১১৮ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা বেশ কিছু বেড়েছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৯ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে অবসরের বয়স ৬০ বছর।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘আসি যাই, বেতন পাই’ যে উক্তিটি প্রচলন ছিল, এখন তা আর নেই। এখন প্রশাসনে জবাবহিদিতা বেড়েছে। দেশের মানুষও সেবা পাচ্ছেন। সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন আমলারা। এক কর্মকর্তা বলেন, আগের দিনে সিএসপি বা অন্য কোন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার দফতরে বসে দিন প্রায় শেষ হয়ে যেত। এখন সহজে উর্র্ধতন কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়। প্রয়োজনে ফোনেও কথা বলা যায়। আগের তুলনায় প্রশাসন এখন অনেক বেশি গণমুখী ও গতিশীল।