নিউজ ডেস্ক:
পোশাক ও বস্ত্র শিল্প খাতের মালিকদের দাবির মুখে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার যে কঠোর লকডাউনের চিন্তা-ভাবনা করছে, তাতে খোলা থাকবে শিল্প, কল-কারখানা। চলবে নির্মাণকাজও। এ বিষয়ে আজ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে, এমন তথ্য গতকাল বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে দুপুরে পোশাক ও বস্ত্র খাতের চার সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাস মারাত্মক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার দাবি জানায়। এ ছাড়া সকালে রপ্তানিমুখী শিল্প খাত ও সংশ্লিষ্ট সংযোগ শিল্প-কারখানাসমূহ খোলা রাখতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবি।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে শর্ত সাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলের নিষেধাজ্ঞা ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে অনলাইনে বিকাল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন ব্যবসায়ী- শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বস্ত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন- ১৪ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন হলেও শিল্প-কারখানা চলবে। এ বিষয়ে কাল (আজ) প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এর আগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এ খাতের চার সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম। বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ইএবি সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি, বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন প্রমুখ। ওই সংবাদ সম্মেলনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি বলেন- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাকশিল্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। পোশাক কারখানা মালিক ও কর্মকর্তা পর্যায়ের দু-একজনের মৃত্যু হলেও শ্রমিক পর্যায়ে কারও মৃত্যুর খবর তাদের জানা নেই। মহামারীকালে সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা। এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি বলেন, পোশাক খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এদের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ জড়িত। সবার স্বার্থে কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি বলেন- লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি হবে না। বাজার হারাতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। কারণ লকডাউনে প্রতিযোগী দেশ ভারত-ভিয়েতনামের কারখানা চালু থাকবে। উৎপাদনও অব্যাহত থাকবে। জীবনের পাশাপাশি জীবিকারও প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি। মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন- লকডাউন কর্মসূচিতে পোশাক খাতকে বাইরে রাখার দাবি করছি। গত বছর সাধারণ ছুটি এবং পরবর্তীতে দুই ঈদে শ্রমিকরা যেভাবে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, আমরা সে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই শ্রমিকরা যদি শহর ছাড়েন, তবে তা দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে আমাদের আবেদন- রপ্তানিমুখী পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হোক। ফারুক হাসান বলেন, জীবন-জীবিকা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে কারখানাগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। শ্রমিকরা কারখানার মধ্যে থাকলে সংক্রমণ হারও কমবে। মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন- পোশাক খাত লকডাউনের আওতায় থাকলে রপ্তানি পণ্যের সঠিক সময়ে শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) নিয়েও শঙ্কা তৈরি হবে। অনেক শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে।