নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারির দুটি তরঙ্গের পর, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। তাই আমাদের তৈরি রাখতে হবে এবং সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা উচিত হবে না। আমরা যে যা পারি তা উৎপাদন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি বিবরণ উপস্থাপন করেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে এটা ঘটেছে এবং বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। আমরা এখন যা করতে পারি, আমাদের জনগণকে এক ইঞ্চি আবাদযোগ্য জমি ফেলে না রাখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এর মানে আমাদের সর্বদা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের পর অনেক সমস্যা হবে, তা এড়াতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের (বিদেশি) রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে হবে। দেশের প্রতিটি গ্রামের উন্নয়ন এবং সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে; যাতে মানুষ গ্রামে বসেই জীবন-জীবিকা চালাতে পারে।
ক্ষমতায় থাকা ও দেশ পরিচালনার বিষয়টিকে একটি ‘সুযোগ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমার সব সময়ের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। এর মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি, এখন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করতে অনেক সাহায্য করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল যেটি দেশের মাটি ও জনগণ থেকে উঠে এসেছে। এ কারণে দলটির সব চিন্তাভাবনা সর্বদা দেশ এবং এর জনগণকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য যেমন বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তেমনি কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছে, এ রকম একটা কথা রটানো হচ্ছে। আমরা উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নিচ্ছি এটা ঠিক। কিন্তু সব সময় আমাদের একটা হিসাব থাকে। আমরা কিন্তু ডিফল্টার নই। আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি প্রত্যেকটা ঋণ আমরা কিন্তু সময়মতো পরিশোধ করেছি। আমরা কিন্তু যত রকম দুর্দশা হোক, এমনকি করোনার মাধ্যেও আমরা কিন্তু ঋণখেলাপি হইনি। তিনি বলেন, আমরা পত্রপত্রিকার লেখালেখি পড়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি না। এটাই বাস্তবতা। কারণ তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে।’
দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপজিশন বলতে দুটো পার্টি আছে। দুটোই একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই। কাজেই মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা তাদের নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা একটা ভোগের জায়গা। সে ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। উন্নত বিশ্বে দেখবেন সেখানে কিন্তু দুই দল হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নেই। আবার আমেরিকার ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের।
এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।’
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পেছনে থেকে তাদের উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে হয়েছিল। কিন্তু তার পরিণতি কি ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাংলা ভাই-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। ৫শ জায়গায় একদিনে বোমা হামলা, অপজিশনে থাকা আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে। একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।