নিউজ ডেস্ক:
ভুটান ও মালদ্বীপের মতো প্রতিবছর বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট পরিমাণে ছয়টি নিত্যপণ্য রপ্তানিতে সম্মত হয়েছে ভারত সরকার।
কোন পণ্য কী পারিমাণ আসবে, তা চূড়ান্ত করতে ২০ আগস্ট উভয় দেশের সচিব পর্যায়ে ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জন্য চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন-এ ছয় পণ্যের কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যদিও বাংলাদেশ ইতঃপূর্বে ভারতের কাছে এ ছয় পণ্যের অনুকূলে বছরে ৫৩ লাখ টনের কোটার প্রস্তাব দিয়েছিল।
তবে বাংলাদেশের এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও পণ্যের পরিমাণ চূড়ান্ত করেনি, যা সচিব পর্যায়ে ওই বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
কোটা সুবিধা পাওয়া গেলে ভারত যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণের এই পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে পারবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোটা সুবিধা ভুটান ও মালদ্বীপকে দিয়ে আসছে ভারত। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন করে বাংলাদেশ।
সূত্রমতে, বাংলাদেশকে কোটার বিপরীতে পণ্য দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে বুধবার বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ ইউং। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উইংয়ের যুগ্মসচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি চূড়ান্ত করতে উভয় দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকের জন্য ১৭ অথবা ২০ আগস্ট দুটি দিন ঠিক করা হয়েছে। ভারত সময় দিলে সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। সেখানে ভারত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এদিকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ৬ পণ্যের ক্ষেত্রে বছরে প্রায় ৫৩ লাখ টন আমদানির কোটা ভারতের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে এ প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি কোটা সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। আমদানির বার্ষিক কোটার মধ্যে চালের পরিমাণ ১৫ লাখ টন।
এর মধ্যে সরকারিভাবে ৮-১০ লাখ এবং বেসরকারিভাবে ৫-৭ লাখ টন। এছাড়া গম আমদানির কোটা সুবিধা চাওয়া হয় ২০ লাখ টন। যার মধ্যে সরকারিভাবে ৫ থেকে ৭ লাখ এবং বেসরকারি পর্যায়ে ২০ লাখ টন। অপর চারটি পণ্যের মধ্যে চিনি ১০ লাখ, পেঁয়াজ ৬ লাখ, আদা এক লাখ এবং রসুন ৫০ হাজার মেট্রিক টন। নিত্যপণ্যগুলোর ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাঠানো হয় ভারতের কাছে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবটি তাৎক্ষণিকভাবে পর্যালোচনা করে ভারত। সেক্ষেত্রে দেখতে পায়, প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের পরিমাণ বেশি চাওয়া হয়েছে। ভারত তখন বলেছিল, পণ্যের পরিমাণ বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়, সাত থেকে আট বছরের বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির রেকর্ড বলে না তাদের এত পরিমাণ পণ্যের দরকার হবে। ফলে এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ভারত কোটা নির্ধারণ করলে পরে প্রয়োজনীয় চাহিদার পর উদ্ধৃত্ত পণ্য থেকে যাবে।
এক্ষেত্রে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই বৈঠকে কোন পণ্য বাস্তবে কত পরিমাণ লাগবে, তা নির্ধারণ করে বাংলাদেশকে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা জানান, সরকারিভাবে চাল ও গম আমদানির বিষয়টি সমন্বয় করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা খাদ্য অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি হয়ে থাকে।
কৃষিজাত পণ্য আমদানির জন্য আবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। ফলে পৃথক পৃথক পণ্য একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার মাধ্যমে আমদানিতে সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে। এ কারণেই সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে জানতে চাইছে ভারত।
প্রসঙ্গত, ২২-২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে উল্লিখিত ৬ পণ্যের আমদানিতে বার্ষিক কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ। তখন ওই প্রস্তাবে আছে গম ৪৫ লাখ, চাল ২০ লাখ, পেঁয়াজ ৭ লাখ, চিনি ১৫ লাখ, আদা দেড় লাখ, ডাল ৩০ হাজার ও রসুন ১০ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪২২ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে ১২২০ কোটি ডলারের এবং রপ্তানি করেছে ২০২ কোটি ডলারের।